শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

নাখালপাড়ায় ঝুলন্ত স্বামী, মেঝেতে স্ত্রীর রক্তাক্ত লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাখালপাড়ায় ঝুলন্ত স্বামী, মেঝেতে স্ত্রীর রক্তাক্ত লাশ

বাবা-মাকে হারিয়ে অসহায় শিশুর কান্না ইনসেটে নিহত আজমত ও ফারজানা

রাজধানীর নাখালপাড়ায় একটি এনজিওর অফিসে ঝুলছিল আজমত আলীর (৪৫) লাশ। আর মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল তার স্ত্রী ফারজানার (৩৬) লাশ। গতকাল সকালে ঘরের জানালা দিয়ে এ দৃশ্য দেখে পুলিশে খবর দেয় তাদের কিশোর ছেলে। পশ্চিম নাখালপাড়ার লুকাস মোড়ের পাশে ৮৫ নম্বর বাড়ির নিচতলা থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। বিকালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফনের জন্য পাঠানো হয় নরসিংদী। আজমত আলীর বাড়ি নরসিংদী। তিনি রাস্তার পাশে মাছ বিক্রি করতেন। ফারজানা বেসরকারি সংস্থা আশার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, পশ্চিম নাখালপাড়ার ৮৫ নম্বর পাঁচ তলা ওই বাড়ির নাম সালেহা গার্ডেন। এর নিচতলায় আশার তেজগাঁও শাখার কার্যালয়। এ অফিসের কাছেই ভাড়া বাসায় থাকতেন আজমত ও ফারজানা। তাদের দুই ছেলে, এক মেয়ে। শুক্র ও শনিবার- এ দুই দিন পাহারা দিতে আশার ওই অফিসেই রাতে থাকতেন তারা। নিয়মিত এ কাজের অংশ হিসেবেই বৃহস্পতিবার রাতে অফিসে ঘুমাতে আসেন আজমত ও ফারজানা। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় তাদের বড় ছেলে ডাকতে আসে। অনেক সময় ধরে দরজায় কড়া নাড়লেও ভিতর থেকে সাড়া না পেয়ে বাড়ির পেছনে গিয়ে জানালা দিয়ে তার বাবাকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে আর মাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। এ দৃশ্য দেখে বাড়িওয়ালাকে খবর দেয়। পুলিশে খবর দিলে তারা দরজা ভেঙে ঢুকে দুজনের লাশ উদ্ধার করে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। লাশ উদ্ধারের সময় ওই নারীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ধারণা করছে, ফারজানাকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন আজমত। তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, আজমতের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। আর ফারজানার লাশ মেঝেতে পড়ে ছিল। সকালে তাদের কিশোর সন্তানের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরের ভিতর দুজনের লাশ পায়। পুলিশ জানায়, ওই দম্পতির ১৫ বছর বয়সী সন্তান সকালে ফোন করে তাদের জানায়, বাবা-মায়ের ঘর থেকে তারা কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না, দরজাও খুলছে না। পুলিশ গিয়ে সকাল ৯টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে দাম্পত্য জটিলতা দীর্ঘদিনের। কলহের কারণে এক পর্যায়ে নাখালপাড়ায় কাছাকাছি দুটো বাসায় আলাদা থাকতে শুরু করেন তারা। সন্তানরা বলছে, মাঝেমধ্যে তাদের বাবা-মায়ের মিটমাট হয়ে যেত, আবার নতুন করে সমস্যা হতো। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রুবায়েত জামান জানান, তাদের মধ্যে আবারও হয়তো দাম্পত্য কলহ চলছিল। সম্ভবত মিটমাটের আলোচনা করতেই স্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন আজমত। কিন্তু কোনো কারণে তা খারাপ দিকে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর