শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ

অর্ধশত মুসল্লি দগ্ধ, নিহত ১ । কেউই শঙ্কামুক্ত নন : চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ

এসি বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত নারায়ণগঞ্জের খানপুর তল্লা মসজিদ। এক দগ্ধের স্বজনের আহাজারি (ডানে] -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জে একটি মসজিদে এশার নামাজ চলাকালে এসির গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। দগ্ধ হয়েছেন অন্তত অর্ধশত মুসল্লি। গত রাত সাড়ে ৮টায় ফতুল্লা উপজেলার খানপুর তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ৩৮ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। নিহতের নাম আবদুল হান্নান (৫৫)। তিনি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি। এই বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার কাজ শুরু করে। নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হোসেন জানান, হাসপাতালে ২০ থেকে ২৫ জন এসেছিল। তাদের কয়েকজনের শরীরে ৯৯ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। বাকি রোগী যারা এসেছিল তাদের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছে। তাদের দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি দগ্ধরা হলেন- মো. ফরিদ, শেখ ফরিদ, মনির, মোস্তফা কামাল, রিফাত, মাইনুদ্দিন, রাসেল, রাশেদ, নয়ন, বাসার মোল্লা, বাহাউদ্দিন, শামীম হাসান, জোবায়ের, জয়নাল, মোহাম্মদ আলী, সাব্বির, মামুন, কুদ্দুস ব্যাপারী, মোহাম্মদ নজরুল, সিফাত, নিজাম, পেনান, নাদিম, হুমায়ুন, ফাহিম, জুলহাস, ইমরান হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমজাদ, মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক ও মুয়াজ্জিন দেলোয়ার।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, কারও অবস্থাই আশঙ্কামুক্ত নয়।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন জানান, তাদের ধারণা এয়ারকন্ডিশনের গ্যাসের লাইন লিক হয়ে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। মসজিদের ফ্লোরের নিচ দিয়ে এয়ারকন্ডিশনের পাইপের সংযোগ ছিল। পাইপ লিক করে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছিল। দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় কেউ হয়তো ইলেকট্রিক লাইনের কোনো সুইচ চালু করতে গেলে বিদ্যুৎ স্পার্ক হয়ে বিস্ফোরণটি ঘটেছে। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক মুসল্লি আহত হয়েছেন। 

বিপ্লব নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মুসল্লিরা সবাই এশার নামাজ জামাতে আদায়ের জন্য রাত সাড়ে ৮টায় কাতারবন্দী হন। কেরাত শুরুর কিছুক্ষণ পরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে মসজিদে আগুন ধরে যায়। এ অবস্থা দেখে আশপাশের লোকজনসহ তারা ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক, মুয়াজ্জিনসহ অন্তত ৫০ জন মুসল্লিকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। কাউকে কাউকে বিবস্ত্র অবস্থায় হুড়োহুড়ি করে বের হতে দেখা গেছে। প্রত্যেকের চেহারা আগুনে ঝলসে গেছে। যাদের অনেককে চেনার উপায়ও নেই। কারও কারও পুরো শরীর ঝলছে গেছে। 

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিস্ফোরণে মসজিদে থাকা ছয়টি এসি পুড়ে গেছে। ১২টি ফ্যানের পাখা আগুনের তাপে বাঁকা হয়ে গেছে। দরজা-জানালার থাই গ্লাস চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। দেয়ালে পুড়ে যাওয়া ছাপ পড়ে গেছে। কোথাও পলেস্তরাও খসে পড়েছে। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আশপাশের আতঙ্কিত মানুষজন ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন। কেউ কেউ মসজিদের বিধ্বস্ত পরিস্থিতি দেখতে ভিড় করেন।

ফাহিম নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, ওই মসজিদের পাশ দিয়ে গ্যাসের একটি মূল লাইন গেছে। দীর্ঘদিন লাইনটি লিক হয়ে গ্যাস বের হচ্ছিল। সংশ্লিষ্টদের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও লিক বন্ধের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই লিকেজের কারণে মসজিদের জানালা সবসময় বন্ধ রাখতে হয়।

সর্বশেষ খবর