টেলিফোন আলাপ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর। গতকাল সকালে তাদের মধ্যে এ টেলিফোন আলাপ হয় বলে ঢাকা ও দিল্লির তরফে জানানো হয়েছে। আলাপে তারা বাংলাদেশ ও ভারতের আসন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে কথা বলেন। সূত্র জানান, এ ষষ্ঠ যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠক হতে পারে ২৯-৩০ সেপ্টেম্বর। পঞ্চম বৈঠক যেহেতু নয়াদিল্লিতে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়, তাই এবারের বৈঠক হবে ঢাকায়। এখন পর্যন্ত বৈঠক ভিডিও কনফারেন্সে করারই সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করতে পারেন এমন চিন্তাও আছে।
ফোনালাপের পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর টেলিফোন আলাপে মন্ত্রী পর্যায়ের ষষ্ঠ জয়েন্ট কনসালট্যাটিভ কমিশনের জেসিসি সভা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে হওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। এ সভা এ মাসের শেষে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। করোনার কারণে ভারতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ার পর সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এস জয়শঙ্কর। অন্যদিকে ফোনালাপের পর এক টুইট বার্তায় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘আজ সকালেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার উষ্ণ বার্তালাপ হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে আসন্ন যৌথ পরামর্শ কমিশনের বৈঠক নিয়ে কথা হয়েছে। এ বৈঠক হবে শিগগিরই। দুই দেশের রাষ্ট্রনেতা-নির্দেশিত পথে আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেব।’ নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ পরামর্শ কমিশন বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এ বৈঠকে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ও বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময়ে যেসব বিষয়ে যৌথ সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করা হবে। এ ছাড়া বড় এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি বণ্টন, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, কানেকটিভিটি, সংস্কৃতি ও জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক। এবারের আলোচনায় নতুন উচ্চপ্রযুক্তি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মহাকাশ গবেষণা, বেসামরিক পরমাণু বিদ্যুৎ সহযোগিতা, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স। ভারত চাইছে কক্সবাজার থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে কেবল যোগাযোগ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে যৌথ অনুষ্ঠান। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন এবং তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি বিষয় অন্যতম অগ্রাধিকার পাবে বলে সূত্র জানিয়েছেন। দুই দিন আগেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এক আলোচনা করে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে বকেয়া সমস্যা মেটাতে নয়াদিল্লি আগ্রহী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অন্যদিকে, ১৩-১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার পিলখানায় বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে দ্বিবার্ষিক বৈঠক হবে। এ বৈঠকের জন্য বিএসএফের নবনিযুক্ত ডিজি রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। গত আগস্টে পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা সফর করেন এবং যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন।