বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে যত ক্ষোভ

নিজামুল হক বিপুল

সরকারি চাকরিজীবনে প্রত্যেক কর্মকর্তারই স্বপ্ন থাকে সচিব পদে আসীন হওয়ার। আর এই পদের জন্য যোগ্য কর্মকর্তারা তো সব সময় স্বপ্ন দেখেন শেষ চেয়ার পর্যন্ত যাওয়ার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনে সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম হতাশা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। যোগ্য, দক্ষ এবং মেধাবী কর্মকর্তাদের অনেকেই চাকরিজীবনের সব শর্ত পূরণের                 পরও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। বরং মেধা তালিকায় অনেক পিছনে থাকা কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেক নজর কেড়ে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের একটি ব্যাচ নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সচিব পদে পদোন্নতি নিয়েছে। এ নিয়েও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ আছে। সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে গত কয়েক দিন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবশ্যই যোগ্যদেরকে যথোপযুক্ত পদে বসানো উচিত। সরকারের উচিত সর্বোচ্চ পদে পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়া।  বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ব্যাচ (বিসিএস ক্যাডার) হিসেবে পরিচিত ৮৪ ও ৮৫ ব্যাচ ধীরে ধীরে অবসরে যাওয়ার পর সরকার গত বছর বিসিএস অষ্টম ব্যাচ অর্থাৎ ১৯৮৯ সালে চাকরিতে যোগদানকারী কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া শুরু করে। ইতিমধ্যে ২০ জনেরও অধিক কর্মকর্তা সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন এই ব্যাচ থেকে। তবে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের বেশ কয়েকজন আছেন যারা ওই ব্যাচের নিচের দিকের কর্মকর্তা। অথচ এই ব্যাচের প্রথম দিকে যারা রয়েছেন তাদের অনেকেই এখন পর্যন্ত পদোন্নতি পাননি। এ নিয়ে যেমন অসন্তোষ আছে, তেমনি অসন্তোষ আছে ব্যাচকে ডিঙ্গিয়ে এখন নবম ব্যাচের কর্মকর্তাদের তড়িঘড়ি করে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া দশম ব্যাচও চাপ দিচ্ছে অষ্টম ব্যাচকে বাদ দিয়ে তাদেরকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য।  প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, বিসিএস অষ্টম ব্যাচ অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছিল ১৯১৬ সালে ২৭ নভেম্বর। এরপর সচিব পদে পদোন্নতি পেতে এই ব্যাচকে অপেক্ষা করতে হয়েছে তিন বছর। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অষ্টম ব্যাচ থেকে প্রথম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া শুরু হয়। অথচ প্রশাসনের নবম ব্যাচ অতিরিক্ত সচিব পদে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তাদেরকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যা অনেকটা সুপারসিডেট। গত বছরের ডিসেম্বরেই নবম ব্যাচ অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার দুই বছর পূর্ণ করেছিল। ঠিক একই সময়ে এই ব্যাচ থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনের প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী ইতিপূর্বে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে তিন বছর বা তার বেশি সময় পার করার পর।  এদিকে প্রশাসনের দশম ব্যাচ অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার দুই বছর এখনো পূর্ণ করেনি। চলতি মাসের শেষ দিকে তাদের দুই বছর পূর্ণ হবে। ইতিমধ্যে তারা সচিব হওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তারা দাবি জানাচ্ছে অষ্টম ব্যাচকে বাদ দিয়ে নবম ও দশম ব্যাচ থেকে সচিব করার জন্য। যদিও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাদের এই প্রস্তাবে খুব একটা সায় দেওয়া হয়নি।  এদিকে প্রশাসনের অষ্টম ব্যাচে এখনো অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন্য কর্মকর্তা রয়েছেন যারা সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য। ব্যাচের প্রথম সারির এই কর্মকর্তাদের চাকরি জীবনে অর্থাৎ এসিআর-এ ও কোনো রকম ত্রুটি নেই। কিন্তু তারা নিজেদের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে তদবির করে সচিব হতে চান না। তারা চান সরকার তাদের যোগ্যতা, মেধা এবং কর্মদক্ষতাকে দেশের কাজে লাগাক। একই সঙ্গে তারা বলছেন, নবম ব্যাচ থেকেও সচিব করা হোক। তাছাড়া নবম ব্যাচের চাকরির বয়সও অনেক বছর আছে। তাই সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বঞ্চিতদের প্রতি যেন সরকার সুনজর দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর