রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
গুজব ছড়িয়ে হত্যা

আলেমদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক রংপুরে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও লালমনিরহাট প্রতিনিধি

কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে যুবক শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা করে মরদেহ আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় আলেম সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রশাসন। গতকাল বিকালে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের শহীদ আফজাল হল কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে জুয়েলকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রংপুরের মানুষ। গতকাল দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জুয়েলের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে হত্যার বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। নিহতের বড় বোন এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। নিহত শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন রোকেয়া সরণির মিস্ত্রিপাড়া এলাকার আবদুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের শহীদ আফজাল হল কক্ষে অনুষ্ঠিত আলেমসমাজের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওহাব ভূঞা, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য্য, জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর, পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা, পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন নাহার এবং পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত প্রমুখ। 

বৈঠকে ওই উপজেলার ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ পাঁচ শতাধিক আলেম উপস্থিত থেকে বুড়িমারী মসজিদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। গুজব না ছড়িয়ে তদন্ত সংস্থা ও প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য আলেমসমাজের প্রতি আহ্বান জানান প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। বৈঠক শেষে নিহত জুয়েলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

বৈঠক শেষে রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হচ্ছে এবং কিছু আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। অন্যদেরও শনাক্তের কাজ চলছে। এ ঘটনায় যারা যতটুকু দায়ী তাদের ততটুকু শাস্তির আওতায় আনা হবে। বাহিরাগত বা বিশেষ কোনো দলের লোক সম্পৃক্ত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনাক্ত আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। 

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওহাব ভূঞা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেছেন, তিনি ঘটনাস্থলে থাকা অনেককেই চেনেন না। সুতরাং এসব বহিরাগত কারা এবং কীভাবে সেখানে গিয়েছেন সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে শহিদুন্নবী জুয়েলকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে রংপুরের মানুষ। গতকাল দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জুয়েলের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে হত্যার বিচার দাবি করে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। মানববন্ধন থেকে শহিদুন্নবী জুয়েল হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। এই কর্মসূচি পালিত হয় বঙ্গবন্ধু সড়কে জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। নিহত শহিদুন্নবী জুয়েলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার মুক্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, কোরআন-হাদিস পড়ত। আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করি না যে, সে কোরআন অবমাননা করেছে। যারা গুজব রটিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’ শহিদুন্নবী জুয়েলের বড় বোন হাসনা আক্তার লিপি বলেন, ‘ওরা আমার ভাইয়ের শরীরের হাড়গুলোও পুড়িয়ে ফেলেছে। আমি এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকালে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুয়েলকে কোরআন অবমাননার গুজব রটিয়ে পিটিয়ে এবং পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

সর্বশেষ খবর