শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আতঙ্কে গোল্ড মনিরের সহযোগীরা

জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে প্রভাবশালীদের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

আতঙ্কে গোল্ড মনিরের সহযোগীরা

রিমান্ডে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে গোল্ড মনিরের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে সোনা চোরাচালান, রাজউকের প্লট দখল ও বিদেশে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তার কাছ থেকে নেওয়া বিভিন্ন সুবিধাভোগী সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন মনির। বাড্ডার সাবেক কমিশনার পলাতক বিএনপি নেতা কাইয়ুমের সব সম্পত্তি দেখভাল করার কথাও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন গোল্ড মনির। এদিকে প্রাথমিক তদন্তে মনিরের চার সহযোগীকে শনাক্তের পর তাদের বাসাবাড়ি ও অফিসে নজরদারি শুরু করেছে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। এদের কেউ কেউ ধরা পড়ার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, তাদের যে কোনো সময় আটক করা হতে পারে। তারা আরও জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে গোল্ড মনির বলেছেন, তার গাড়ির ব্যবসায় ক্রেতা ছিলেন মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ, সচিবসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। প্রথম দিনেই বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন মনির। নিজের ও স্ত্রীর নামে চারটি লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলেও জানিয়েছেন মনির। তিনি এও জানান, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই যাওয়ার

কথা ছিল তার, এজন্য তিনি বিদেশি মুদ্রা কাছে রেখেছিলেন। দেশের বাইরে বারবার যাওয়া-আসার কারণেও কিছু রিয়াল, ডলার বা অন্যান্য মুদ্রা তার কাছে ছিল বলে স্বীকার করেছেন তিনি। মালয়েশিয়ায় পলাতক কাইয়ুমের অনুপস্থিতিতে মূলত তিনিই (মনির) সব দেখাশোনা করা এবং বিদেশে টাকা পাঠানোর দায়িত্ব পালন করতেন বলেও জানিয়েছেন। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে মনির বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এবং তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউকের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গেও তার গভীর সখ্য রয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমেও তিনি দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। পাচারের টাকা দিয়েই মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেন তিনি। তবে তার রাজউকের প্লট হাতিয়ে নেওয়া শুরু হয় বিএনপি জোট আমলে।

সূত্র জানায়, ২০০০ সালের শেষের দিকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিজ বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও জমির জাল দলিলসহ গোল্ড মনিরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অপহরণ, চোরাচালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে তার নামে একাধিক মামলা। ডিআইটি প্রজেক্টে অন্যের নামে থাকা একাধিক প্লট দখলের বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চলছে। মনির গাউছিয়াতে থাকা তার একটি স্বর্ণের দোকানকে চোলাচালানের সোনা বিক্রির হটস্পট হিসেবে পরিণত করার বিষয়টি নিয়েও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, মনিরের অন্যান্য সহযোগীর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা। মনিরের গ্রেফতারের খবরে গত ২১ নভেম্বর থেকে তার দুই সহযোগী গা ঢাকা দিয়েছেন। সূত্র জানায়, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কী পরিমাণ সোনার চালান দেশে এনেছেন ও পাচার করেছেন- তা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই মধ্যে গোল্ড মনির, তার স্ত্রী-সন্তান এবং মায়ের সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীর কাছে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর