রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আর্থিক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। একটি জরিপের জবাবে দেশের প্রায় ৮৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, করোনার প্রভাবে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। শিল্পকারখানায় বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমে গেছে। ভেঙে পড়েছে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী দুই বছর কর্মীদের বেতন না বাড়ানোসহ ১৩ দফা সুপারিশ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) করা জরিপে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়। দেশি-বিদেশি যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, তাদের ওপর চলতি বছরের ২৪ জুন থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত যৌথভাবে একটি জরিপ পরিচালনা করে বিডা ও আইএফসি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম স্টিল রি-রোলিং মিলস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি লোহার ব্যবসা করি। করোনায় আমার নিজের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কনস্ট্রাকশন বন্ধ। বাজারে ক্রেতা নেই। বেচাকেনাও নেই।’ কাজী আকরাম বলেন, ‘শুধু দেশের শিল্পকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নয়, সারা বিশ্বেই ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথম দফা সংক্রমণের পর এখন দ্বিতীয় দফার সংক্রমণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এটা কত দিন স্থায়ী হবে বলা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন সরকার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে। সরকারের কী ধরনের প্রস্তুতি আছে তা জানি না আমরা।’

তবে প্রথম দফায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় সরকারের প্রণোদনা সুবিধা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যাংক সমস্যা করলেও আমরা খুব দ্রুত প্রণোদনা সহায়তা পেয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মানবিক। শিল্প-বাণিজ্যের বিষয়েও সচেতন তিনি। আশা করি, করোনার সেকেন্ড ওয়েভ থেকে দেশের শিল্পকারখানা রক্ষায় তিনি উদ্যোগ নেবেন।’ বিডা ও আইএফসির জরিপের তথ্যানুযায়ী, করোনা সংক্রমণের কারণে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে দেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশে যখন করোনা সংক্রমণজনিত মৃত্যু ও আক্রান্তের হার সর্বোচ্চ ছিল তখন অনেক কারখানাই তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। প্রায় ৮৩ শতাংশ দেশীয় কোম্পানি বলেছে সাধারণ ছুটির সময় তারা কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। ৮০ শতাংশ জানায় তাদের পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ৭০ শতাংশ উদ্যোক্তা বলেছেন তাদের বিনিয়োগ ও শ্রমিকের উৎপাদনসক্ষমতা কমেছে। এ জরিপের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যদি পোশাকশিল্পের কথা ধরেন তবে আমি বলব, শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৩ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে অনেক ঝামেলা হয়েছে। ক্রেতারা আমাদের পণ্যের দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। অক্টোবরে এসে আমাদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। প্রচলিত-অপ্রচলিত সব মার্কেটে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে।’ বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ফলে আমরা একটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। প্রত্যেক ক্রেতাই আসলে চাচ্ছেন তার ক্রয়াদেশ ধরে রাখতে এবং অর্ডারগুলো যাতে দেরি করে সরবরাহ করা হয়, যাতে তার ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তারা সে চেষ্টা করছেন।’ রুবানা হক বলেন, ‘সামনের সময়টা আমাদের জন্য আরও কঠিন হবে। আগামী মাসে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের টাকা ফেরত নেওয়া শুরু হবে। এটা আমরা কীভাবে পারব জানি না।’ প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি বেতন পরিশোধের জন্য যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে তা আগামী বছরের জুন পর্যন্ত অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেন তিনি। আগামী জুনের পর রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট।

সর্বশেষ খবর