বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক

- জুনায়েদ বাবুনগরী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে। বেলা সাড়ে ১১টায় হাটহাজারী মাদরাসা মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার, হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। অন্যদিকে কয়েক দিন আগে আল্লামা শফীকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তাঁরই (আল্লামা শফী) শ্যালক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন আদালতে ৩৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। সংবাদ সম্মেলনে সদ্য ঘোষিত হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, আল্লামা শফীর মৃত্যু নিয়ে একটি মহল সরকার থেকে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন। যে মামলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। দারুল উলুম মাদরাসা ও হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করায় তিনি প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেফাজতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ড. নুরুল আফছার আজাহারী। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অসুস্থতার পর হাসপাতালে নেওয়ার সময় দীর্ঘদিনের খাদেম মোহাম্মদ শফি, মজলিসে শুরার চারজন সদস্যসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। হুজুরের অক্সিজেন খোলা হয়নি। হুজুরকে মাদরাসা থেকে অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় বের করা হয়েছিল। তবে এসব নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার  চালাচ্ছে একটি চক্র। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আল্লামা শফী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর দীর্ঘ সময়ের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশের অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ছিলেন। তিনি হাটহাজারী মাদরাসাসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের কওমি মাদরাসার মুরব্বি ও অভিভাবক ছিলেন। তাঁর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু আল্লামা শফীর মৃত্যু নিয়ে একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নির্জলা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। হযরতের ইন্তেকালের তিন মাস পর ওই মহল এই মৃত্যুকে অস্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে একটি মিথ্যা মামলা করেছে। এটি রাজনৈতিক চক্রান্ত এবং দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি। একটি চিহ্নিত দালাল গোষ্ঠী আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে জিম্মি করে হাটহাজারী মাদরাসায় ব্যক্তিতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিল। আরও বলা হয়, আল্লামা শফীর স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি তাঁর পরিবার ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্টভাবে দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন। মামলায় তথাকথিত হত্যার যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো অতিরঞ্জিত ও মিথ্যাচারে পরিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা কারোরই এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালতে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন বাদী হয়ে মামলায় উল্লেখ করেছেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নবনির্বাচিত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের পরিকল্পনা এবং মামলার ১ নম্বর আসামি আরেক যুগ্ম-মহাসচিব নাসির উদ্দিন মুনিরের নেতৃত্বে আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এক মাসের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দিয়েছে। মামলার বাদী আল্লামা শফীর শ্যালক মঈনুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হুজুরকে অক্সিজেন ও রাইস টিউব খুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যখন মেডিকেলে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিল, তখন তাঁকে প্রায় দেড় ঘণ্টা মাদরাসার দরজায় আটকে রাখা হয়েছিল। এ সময় মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনিরের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে হুজুরের অক্সিজেন খুলে নেওয়া হয়। এসব বিষয় মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

সংবাদ সেন্ডেম্মলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার শুরা সদস্য আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, আল্লামা নোমান ফয়জী, হেফাজত নেতা আল্লামা তাজুল ইসলাম, আল্লামা মোহাম্মদ শোয়াইব, আল্লামা মুফতী কেফায়েতুল্লাহ, আল্লামা মুফতী জসিম উদ্দীন প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর