বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বাড়ছেই ক্যান্সার রোগী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে দিনকে দিন বাড়ছেই ক্যান্সার রোগী। জেলায় বর্তমান জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি। কিন্তু বিশাল এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে আক্রান্ত ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় ভরসা মাত্র ৪২টি শয্যা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে আছে ২৪টি এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে আছে ১৮টি শয্যা। মরণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়লেও বাড়ছে না সেবাকেন্দ্র। বিত্তবানরা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন। কিন্তু অসহায়, খেটে খাওয়া ও দরিদ্র মানুষদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আমি আছি, আমরা থাকব’। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্যারিস চার্টার দ্বারা বিশ্ব সম্মেলনে প্রথম বিশ্ব ক্যান্সার দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকালে চমেক হাসপাতালে সীমিত আকারে র‌্যালি এবং মা ও শিশু হাসপাতালে বিশ্বমানের ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

জানা যায়, সরকার ‘বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অধীনে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে বিশেষায়িত ক্যান্সার সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে। চমেক হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় ৩০ কাঠা জায়গায় ১৭ তলা ভবনে ১০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ কেন্দ্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ চারটি রেডিওথেরাপি মেশিন স্থাপনসহ ক্যান্সারের মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা চলবে। পক্ষান্তরে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উদ্যোগে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে আন্তর্জাতিক মানের ‘ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’। আজ এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হচ্ছে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে একযোগে ক্যান্সারের বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের একটি ওয়ার্ড হিসেবে ১০০ শয্যার বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্রটি হবে। প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে। এখন কার্যাদেশ দেওয়ার অপেক্ষা। এটি নির্মিত হলে চট্টগ্রামে ক্যান্সারের মাল্টিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা চলবে।’

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ডা. শেফাতুজ্জাহান বলেন, প্রতিনিয়তই ক্যান্সারের রোগী বাড়ছে। মা ও শিশু হাসপাতালে ২০২০ সালে ১ হাজার ৬০৬ জন, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৯৫০ জন, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৪৯৮ জন ও ২০১৭ সালে ৬৯৯ জন চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এই সময়ের মধ্যে কেমোথেরাপিসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করেন ৪ হাজার ৪ জন রোগী। শয্যার অভাবে প্রতিদিনই রোগী ফেরত দিতে হচ্ছে।

চিকিৎসকরা মনে করেন, ক্যান্সারের জন্য দায়ী কার্যত খাদ্যাভ্যাস। চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে শুঁটকি, তেলজাতীয় খাবার, রেড মিটের আধিক্য ও এটি লবণ চাষের অঞ্চল হওয়ায় তেজস্ক্রিয়তার আশঙ্কা বেশি। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই উপকূলীয় বাসিন্দা। ফলে সারা দেশের তুলনায় এ অঞ্চলের মানুষ পাকস্থলীসহ নানা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে দেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার সাড়ে ৭ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ২২ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সারা বিশ্বে প্রতি ৯ জনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ১ জন।

সর্বশেষ খবর