বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অর্থলোভ নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থলোভ নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে দল ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নিয়েছিল তাদের অস্তিত্ব নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। যারা অর্থলোভ নিয়ে রাজনীতি করে তারা কখনই রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারে না।

গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী             লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু বানিয়েছিল। জনগণের ভাগ্য বদলের চেয়ে তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর মানুষ বুঝতে পেরেছে ক্ষমতা জনগণের জন্য, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সবার কাজ থাকবে, ঘর থাকবে, সবাই খাবার পাবে, সবাই শিক্ষিত হবে। ভালো চিকিৎসা পাবে। বঙ্গবন্ধু এ দেশের নিপীড়িত, অসহায়, বঞ্চিত, দারিদ্র্য-ক্ষুধাপীড়িত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। সেই সংগ্রামের ফসল স্বাধীন বাংলাদেশ। সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা যেভাবে চেয়েছিলেন, তেমনই একটি শিক্ষা-সংস্কৃতি-অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ ও মর্যাদাশীল জাতি গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সংগ্রামের পর এ দেশে গণতন্ত্র ফিরেছে। সেই সংগ্রামে যুবলীগেরও অবদান ছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেন যুবলীগেরই ছিল। যুবলীগকে আগামীতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। জাতির পিতার সেই আদর্শ বুকে নিয়ে সংগঠন করতে হবে। তাহলেই এ দেশে তরুণ সমাজের জন্য কাজ করা যাবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিএনপি ভেবেছিল ২ হাজার কোটি টাকা থাকলে তাদের কেউ সরাতে পারবে না। কিন্তু তাদের সরতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, আমি নাকি বিরোধী দলের নেতাও হতে পারব না। আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’ কিন্তু উনার মুখের কথা তাঁর জন্যই প্রযোজ্য হয়েছে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এখনো আমরা ক্ষমতায় আছি বলে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারছি। এজন্য আমরা মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কারও কোনো কথায় কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। এ নিয়ে অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়। কোনো দিকে কান দিলে চলবে না। মানুষের ভয়টা দূর করতে হবে। ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই তো বলেছে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসবে না। অনেক উন্নত দেশও কিন্তু ভ্যাকসিন পায়নি। আমি কোনো দিকে তাকাইনি। আমার কাছে মানুষ সব থেকে বড়, মানুষের জীবন বড়। আমরা প্রথম ভ্যাকসিনের জন্য টাকা দিই, ১ হাজার কোটি টাকা আলাদা রাখি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডভান্স করে দিয়েছিলাম যখনই উৎপাদন হবে, বিশেষজ্ঞরা অনুমোদন দেবে তখনই যেন বাংলাদেশ পায় এবং সেটাই আজ প্রমাণিত সত্য। আমি ভারতকে ধন্যবাদ জানাই তারা আমাদের ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ প্রমুখ। আলাচনা সভা পরিচালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মালদ্বীপকে সাহায্য করার আশ্বাস : মালদ্বীপের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে বলে সফররত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহীদকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এই আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা আশ্বাস দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় মালদ্বীপকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ এখন তার নিজস্ব ‘প্রশমন’ ও ‘অভিযোজন’ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটিতে বসবাসরত বৈধ কাগজবিহীন বাংলাদেশিদের বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে তার সরকারের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আরও অবহিত করেন, যেসব বাংলাদেশি মালদ্বীপে অবস্থান করছেন, তাদের বিনামূল্যে কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাসানচরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে একজন লোকও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউএস) স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকালে এই দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় তাঁর সন্তোষ প্রকাশ করেন।

আবদুল্লাহ শহীদ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে অসামান্য উন্নয়ন ও সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভুয়সী প্রশংসা করেন। সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ও মুজিববর্ষের উৎসব উদ্যাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় মালদ্বীপকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর