মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সংকট নেই টিকার

২২ ফেব্রুয়ারি আসছে দ্বিতীয় চালান, সরকারের হাতে ৫৮ লাখ ডোজ, এ পর্যন্ত নিয়েছেন ১১ লাখ প্রথম ডোজের আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

টিকাদান শুরুর ১৫ দিনে টিকা নিয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। সরকারের হাতে এখনো মজুদ রয়েছে ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৯৮ ডোজ টিকা। এর মধ্যেই ২২ ফেব্রুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকার দ্বিতীয় চালান আসবে বলে জানা গেছে। টিকাদান পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে দ্বিতীয় ডোজ চার সপ্তাহের পরিবর্তে আট সপ্তাহে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ    করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে তারা টিকা গ্রহণ করেন।

টিকার ডোজের পরিকল্পনা পরিবর্তন বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার সময়ে পরিবর্তন   করা হয়েছে। ইতিমধ্যে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য এক মাস পরের তারিখ দেওয়া হয়েছে। সে তারিখ বদলে নতুন এসএমএস দেওয়া হবে। আমাদের পরামর্শক কমিটি, ওয়ার্ল্ড ভ্যাকসিনেশন কমিটি, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন সবাই মিলে পরামর্শ দিয়েছে যে এটা আট সপ্তাহ পরে হলে ভালো হয়। এ কারণে আমরা দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সময়ে পরিবর্তন করেছি।’

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা শুরুতে জানিয়েছিল এ টিকার দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান হবে চার সপ্তাহ। কিন্তু পরে বলা হয় এ ব্যবধান বাড়লে টিকার কার্যকারিতাও বাড়ে। তখন সে অনুযায়ী বাংলাদেশের টিকাদান পরিকল্পনা সাজানো হয়। বলা হয় প্রথম চালানে পাওয়া সব টিকা দিয়ে দেওয়া হবে, প্রথম মাসে টিকা পাবে ৬০ লাখ মানুষ। পরের চালানের টিকা পেলে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। কিন্তু টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক একটি অনিশ্চয়তা থাকায় ফেব্রুয়ারির শুরুতে সে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। সিদ্ধান্ত হয় হাতে থাকা ৭০ লাখ ডোজের সব প্রথম মাসে না দিয়ে অর্ধেক সংরক্ষণ করা হবে। অর্থাৎ প্রথম মাসে ৩৫ লাখ লোক টিকা পাবে, পরের মাসে সংরক্ষণ করা টিকা থেকে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। তাতে দ্বিতীয় চালান পেতে দেরি হলেও প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। তবে দ্বিতীয় চালান হাতে পেয়ে গেলে আবারও পুরনো পরিকল্পনায় ফিরে যাওয়া হতে পারে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। কিন্তু জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এখন টিকার কার্যকারিতার সঙ্গে দুই ডোজের সময়ের পার্থক্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ায় পরিকল্পনায় আবার পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরসূত্রে জানা যায় গতকাল টিকা দিয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন। ২৭ জানুয়ারি টিকাদান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। গতকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ২০ লাখ ৩০ হাজার ৫০৪ জন। রাজধানীতে টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন। সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কিনেছে ৩ কোটি ডোজ টিকা। এর প্রথম চালান হিসেবে দেশে এসেছে ৫০ লাখ ডোজ এবং ভারত থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছে ২০ লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে মোট ৭০ লাখের মধ্যে এখন পর্যন্ত সরকারের হাতে রয়েছে ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৮৯ ডোজ টিকা। এ টিকা আনছে বাংলাদেশে সেরামের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। টিকার দ্বিতীয় চালান ২২ ফেব্রুয়ারি আসবে বলে জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন। গতকাল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘দ্বিতীয় চালান এ মাসেই আসবে। ২২ ফেব্রুয়ারি চলে আসবে আশা করছি। প্রতি মাসে তাই হবে। এবার একটু কম আসবে। সঠিক পরিমাণটা বলতে পারছি না। তবে ২০-৩০ লাখের মতো আসবে। আমাদের চাহিদার ওপর নির্ভর করবে। টিকা সংকটের কোনো সুযোগ নেই। ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে যেখানে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ টিকা দিতে পারছে।’ টিকা দেওয়ার পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমি নিজে টিকা নিয়েছি, আপনারা যে যেখানে আছেন সবাই টিকা নিন। করোনা মোকাবিলায় পুলিশ সম্মুখসারির কর্মী হিসেবে কাজ করেছে। করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকে আতঙ্কিত হলেও পুলিশ আতঙ্কিত হয়নি। পুলিশ সদস্যরা সব বিভাগীয় ও জেলা পুলিশ হাসপাতালে টিকা নিচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে পুলিশের সব সদস্য টিকা গ্রহণ করবেন।’ এ সময় অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজি এস এম রুহুল আমিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা টিকা গ্রহণ করেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর