রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানেই এগোবে অর্থনীতি

------ জসিম উদ্দিন

রুহুল আমিন রাসেল

ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানেই এগোবে অর্থনীতি

দেশের সব স্তরের ছোট-বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করতে পারলেই অর্থনীতি এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন এফবিসিসিআই আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। সংগঠনটির সাবেক এই প্রথম সহসভাপতি বলেন, করোনা মহামারীর এই বিশ্ব বাস্তবতায় আমরা ভালো আছি। অর্থনীতিও ভালো করছে। এখন সামনের দিনগুলোতে নীতি প্রণয়নে নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে সমন্বয় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সম্পর্কোন্নয়ন ও গভীরতর করতে পারে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন মাত্র ১৮ বছর বয়সে ব্যবসায় হাতেখড়ি নিয়ে খ্যাতনামা শিল্পদ্যোক্তায় পরিণত হওয়া মো. জসিম উদ্দিন। দেশের অন্যতম শীর্ষ এই ব্যবসায়ী নেতা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্পাঙ্গনে যাত্রা শুরু করে ব্যবসা ছড়িয়েছেন- গণমাধ্যম, ব্যাংক, বীমা, হোটেল, আবাসন, সিমেন্ট, ইলেকট্র্রনিকস, কেমিক্যাল, খাদ্য প্রস্তুতকরণ, ট্রেডিং, তৈরি পোশাক ও পশু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ বহু খাতে। বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিপিজিএমইএ সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন অর্থনীতিতে অবদান রেখে একাধিকবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্ব- সিআইপি সম্মাননা পেয়েছেন। জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও জিতেছেন একাধিকবার। প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন ৫৬ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী প্রজন্মকে সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ উপহার দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ প্রসঙ্গে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের লক্ষ্য অর্জনে এফবিসিসিআইর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের যুক্ত করে কাজ করতে চাই। ছোট- বড় সব ব্যবসায়ীর মাঝে ঐক্য সুদৃঢ় করতে চাই। ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিকাশ এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নে বেসরকারি খাতের অংশীজনদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও শক্তিশালী করার এই যাত্রা আরও বেগবান করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

এফবিসিসিআইর এই সভাপতি প্রার্থী বলেন, বাংলাদেশের স্থপতি, আমাদের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০, ভিশন ২০৪১ ও একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ও মানুষ। নতুন নতুন সম্ভাবনায় প্রতিনিয়ত সাড়া দিয়ে এক নির্ভয় দূরদর্শী নেতৃত্ব সমৃদ্ধ করে চলেছে আমাদের অর্থনীতি। এক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচনেই আগামী দিনে মনোযোগ দিতে চাই। মো. জসিম উদ্দিন মনে করেন- এফবিসিসিআইর আগামী নেতৃত্বকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে এফবিসিসিআই অধিভুক্ত সারা দেশের সব চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনসমূহের আর্থিক এবং সাচিবিক সক্ষমতা বাড়ানো খুবই জরুরি। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসমূহকে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেতে সহযোগিতা করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সংযোগ স্থাপন প্রয়োজন। বাজেটে এফবিসিসিআইর সুপারিশ বাস্তবায়নে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে বেসরকারি খাতের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি করে ব্যবসায়ী, একাডেমিক এবং থিংক-ট্যাংকদের নিয়ে একটি বিশ্বমানের দরকষাকষি কমিটি গঠন করতে হবে। বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। অনেক ছোট থেকে বড় হয়েছি। আমিও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ছিলাম। সুতরাং আমি জানি ছোট ব্যবসায়ীদের দুঃখ-দুর্দশা। এফবিসিসিআইর মতো সংগঠন সবার জন্য দরকার। বিশেষ করে ছোটদের। বড়দের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারেন। কিন্তু ছোটরা নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারেন না। তাদের জন্য বেশি সহায়তা দরকার। এফবিসিসিআই হওয়া উচিত গবেষণাভিত্তিক। ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে কাজ করা উচিত। এ বিবেচনায় এফবিসিসিআই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত। যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তাদের সংগঠনই এফবিসিসিআই হতে হবে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্তত ১ হাজার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে এফবিসিসিআইকে অনন্য ভূমিকা পালন করতে হবে। তার মতে, আন্তদেশীয় যোগাযোগের মাধ্যমে আমদানি, রপ্তানি ও বিনিয়োগ সহজ করতে হবে। বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে হবে। এশিয়া বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এফবিসিসিআইকে এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে সঠিক ভূমিকা রাখতে হবে। বিশ্বের প্রায় সব দেশ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করছে। আমাদের এই সক্ষমতা বাড়াতে হবে। মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো যখন বাস্তবায়ন হবে, আমি যেটা শুনেছি সেখানে কাস্টম ও পরিবেশের কী হবে, সমস্যাগুলো কী, সেটা চিহ্নিত হয়নি। এসব পলিসি ঠিকমতো করা না গেলে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয়ভাবে বিক্রির জন্য পণ্য বের করতে হলে বিদেশ থেকে আনার সমান ট্যাক্স দিতে হবে। যদি সেটা করা হয়, তাহলে স্পেশাল ইকোনমি জোনে কেউ যাবে না। তার মানে ওই জায়গাতে আমাদের কাজ করতে হবে। মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন হলেই শিল্পায়ন হবে। দেশ শিল্পায়নের দিকে এগোচ্ছে। এ মুহূর্তে সেবা খাতকে গুরুত্ব দেওয়া খুবই দরকার। সেবা খাত নিয়েও কাজ করতে হবে। সেখানে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। একটি দেশ যখন মধ্যম আয়ের হয়, তখন সেবা খাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর