শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

হেফাজতের ছয় নেতা রিমান্ডে, আরও দুজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরনো ও নতুন মিলিয়ে নাশকতার মামলায় হেফাজতের এখন পর্যন্ত ১৬ শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের অধিকাংশই রিমান্ডে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। এ ছাড়া আরও ১৯ জন নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র। গতকাল কথিত শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ হেফাজতের আরও ছয় নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোট ৩৪ দিনের রিমান্ড আদেশ দিয়েছে আদালত।

গতকাল বিকালে পুরান ঢাকার বংশাল থেকে হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সহ-দফতর সম্পাদক মাওলানা ইহতেশামুল হক সাখীকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। এর আগে ভোরে সহিংসতার ঘটনায় পল্টন থানায় করা একটি মামলায় হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবীকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এদিকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হককে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। এদিন হেফাজতের কোন কোন নেতার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা নিজেদের কবজায় রাখার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া হেফাজত নেতা-কর্মীদের উসকানি, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, সরকার পতনসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিশদভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। বুধবার হেফাজতের সহকারী মহাসচিব খুরশিদ আলম কাশেমীকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে এবং যুগ্ম-মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক শারাফাত হোসাইনকে কাফরুল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান ভার্চুয়ালি শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। গতকাল আদালত সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক নাসিরুল ইসলাম মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ভার্চুয়াল আদালতে হাজির করেন। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে মতিঝিল থানার পৃথক মামলায় মোট ১১ দিনের রিমান্ডে আছেন মাদানী। এর আগে ২১ এপ্রিল মতিঝিল থানার আরেক মামলায় তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এদিন ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে তান্ডব ও সহিংসতায় হেফাজতে ইসলামের দুই নেতাকেও রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সহসভাপতি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির খোরশেদ আলম কাসেমীকে সাত দিন এবং সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক শারাফাত হোসাইনকে পাঁচ দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ। একই আদালত হেফাজতের অপর তিন নেতার পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তারা হলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমেনী, হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও হেফাজত নেতা মাওলানা সানাউল হক। জানা গেছে, বুধবার হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী এবং মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলামকে পৃথক তিন মামলায় সাত দিন করে ২১ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত।

গাজীপুরের মামলায় মাদানী ফের রিমান্ডে : কথিত শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ফের দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানা পুলিশ। গতকাল দুপুরে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বাসন থানায় নেওয়া হয়েছে। এর আগে বুধবার ভার্চুয়ালি শুনানি শেষে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ নাজমুন নাহার। জিএমপির গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা অপর একটি মামলায় ১৮ এপ্রিল দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২০ এপ্রিল আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সর্বশেষ খবর