শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

মহামারী প্রতিরোধে পাঁচ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্‌বান প্রধানমন্ত্রীর

৩৫ লাখ হতদরিদ্র পাবেন নগদ সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী প্রতিরোধে পাঁচ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্‌বান প্রধানমন্ত্রীর

ভবিষ্যতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স কভিড-১৯ এর চেয়েও বেশি প্রাণঘাতী মহামারীর কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল

রেজিসট্যান্সের (এএমআর) বিরুদ্ধে লড়াই এবং ভবিষ্যতের মহামারী প্রতিরোধে পাঁচটি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্‌বান  জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা বিশ্ব এখন ধ্বংসাত্মক কভিড-১৯ মহামারী প্রত্যক্ষ করছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রাণঘাতী মহামারীর কারণ হতে পারে।

গতকাল রাতে ‘হাই লেভেল ইন্টারেকটিভ ডায়ালগ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স (এএমআর)’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় তিনি এ আহ্‌বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিপদ (অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স) সময় মতো সামলাতে না পারলে পরিণামে মানব জীবন, প্রাণী এবং গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান অনুযায়ী ২০৫০ সাল নাগাদ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্সের কারণে প্রতি বছর ১ কোটি মানুষ মারা যাবে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার যা খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতের মহামারী প্রতিরোধে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্সের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা জরুরি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এএমআর বিষয়ে ২০১৫ সালের গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান, ২০১৬ সালের ইউএন পলিটিক্যাল ডিক্লারেশন এবং এএমআর-এর সমস্যা মোকাবিলার  জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স (এএমআর) এর গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপের সহসভাপতি হিসেবে  এএমআর-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করতে নিজের আগ্রহের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা তাঁর প্রথম প্রস্তাবনায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় স্তরে এএমআর বিষয়ে সমন্বিত বহু-বিভাগীয় এবং সম্মিলিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্‌বান জানান। দ্বিতীয় প্রস্তাবে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স প্রতিরোধ করতে ভালো উৎপাদন, পরীক্ষাগার অনুশীলন এবং নজরদারি কাঠামোর কথা বলেন শেখ হাসিনা। তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য সাশ্রয়ী এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক্স সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলেন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মালিকানা শেয়ার এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর করার কথা বলেন। চতুর্থ ও পঞ্চম প্রস্তাবনায় শেখ হাসিনা রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এএমআর প্রতিরোধ কার্যক্রমের জন্য টেকসই অর্থায়ন এবং এর (এএমআর) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিশ্ব জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির কথা বলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার তথ্য অনুযায়ী, যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস, প্যারাসাইট সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে নিজের ভিতরে পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং এদের বিরুদ্ধে ওষুধে কাজ করে না তখন সেটিকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স (এএমআর) বলে। এই  এএমআর-এর কারণে ইনফেকশন চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে এবং রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, মৃত্যু হতে পারে।

৩৫ লাখ হতদরিদ্র পাবেন নগদ সহায়তা : বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের অভিঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশের দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ যারা দিন আনে দিন খায়। এসব অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষ স্বাভাবিকভাবে সরকারি-বেসরকারি সহায়তার বাইরেই থাকেন। এই শ্রেণির ৩৫ লাখ মানুষকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ২ থেকে ৬ মের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহায়তা হিসেবে প্রত্যেককে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দেবেন। পাশাপাশি সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ কৃষক পরিবারকেও ৫ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেবে সরকার। সেটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য উদ্যোগ। গতকাল অর্থমন্ত্রীর দফতর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত কতিপয় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসজনিত কারণে কর্মহীনতা ও আয়ের সুযোগ হ্রাসের কবল থেকে দেশের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছর ২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে যেসব নিম্ন আয়ের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন, তাদের সহায়তার জন্য ‘নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে পরিবারপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ৮৮০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা সরাসরি উপকারভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় চলমান করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ নিম্ন আয়ের পরিবারকে পরিবারপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা করে মোট ৮৮০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২ মে প্রধানমন্ত্রী এ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। এ ৩৫ লাখ পরিবারকে ইএফটির মাধ্যমে তাদের নির্দিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ সহায়তা সরাসরি প্রেরণ করা হবে। অতিদরিদ্র, কর্মহীন নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী যাতে এ কার্যক্রমের আওতায় আসে সে লক্ষ্যে বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্যোগপ্রবণ, অতিদরিদ্র এলাকা এবং জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক ইত্যাদি পেশার নিম্ন আয়ের লোকজন যাতে এ আর্থিক সহায়তা পান তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকৃত দরিদ্র ব্যক্তি চিহ্নিত করা হয়েছে, যাতে কেবল প্রকৃত অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী এ অর্থ পায়। সূত্র জানায়, এ বছরের বিভিন্ন সময় সংঘটিত ঝোড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৩৬টি জেলার ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ২৪৯ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ১০ হাজার ৩০১ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৫৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরও প্রত্যেককে ৫ হাজার নগদ অর্থ সহায়তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর