করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বজুড়ে বেহাল অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশেও বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। গত বছর (২০২০) মোট এফডিআই এসেছে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এর আগে এত বেশি হারে কমেনি। সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের সর্বশেষ বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কমার পাশাপাশি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ কমায় প্রভাব পড়েছে মোট এফডিআই প্রবাহে। বাংলাদেশে গত বছর প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ৩০০ কোটি ডলারের আদেশ বাতিল হয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগই দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর ক্রেতারা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং আর্থিক খাতের বড় অংকের বিদেশি বিনিয়োগ এই সময়ে ফিনটেক, ওষুধ, এলএনজি কেন্দ্র ও কৃষিভিত্তিক উদ্যোগে স্থানান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এসব খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য উৎসাহিত করে আসছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগের বাধা দূর করতে আইন সংস্কারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও আঙ্কটাডের এই প্রতিবেদনে বলা হয়। এসব পদক্ষেপের মধ্যে পাঁচটি আইন সংস্কারের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আঙ্কটাডের এই প্রতিবেদনে, এফডিআইয়ে বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে করোনা মহামারীর প্রভাবকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বে এক তৃতীয়াংশের বেশি কমে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ডলার হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভূমিকায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতিরেস বলেন, এক দশক আগে বিশ্ব মন্দার সময়কার চেয়েও তা নিচে নেমে গেছে। এ সময়ে বিশেষভাবে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে উন্নয়নশীল দেশের শিল্প-কারখানার পাশাপাশি নতুন অবকাঠামো খাতের বিনিয়োগ বলে তিনি উল্লেখ করেন। এটি এখন শঙ্কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা গরিব দেশগুলোতে টেকসই উন্নয়নের জন্য এফডিআই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আঙ্কটাডের হিসাবে গত বছরে বিশ্বজুড়ে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১ লাখ ট্রিলিয়ন ডলার। এর আগের বছর যা ছিল দেড় লাখ ট্রিলিয়ন ডলার। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ কমে মোট এফডিআই এসেছে ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৮৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ৩৬১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। একক বছরে যা ছিল সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ও বিশ্বে কমলেও গত বছর এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এফডিআই ৪ শতাংশ বেড়ে ৫৩৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
আঙ্কটাডের বিনিয়োগ ও উদ্যোগ বিষয়ক পরিচালক জেমস জান বলেছেন, মহামারীকালেও এই অঞ্চলে এফডিআই যেমন বেড়েছে, তেমনি এখান থেকে অন্যত্রও বিনিয়োগ করার পরিমাণ বেড়েছে। শুধু উন্নয়নশীল এশিয়াতেই বিদেশি বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তার মতে, ২০২১ সালেও বাণিজ্য ও শিল্প-উৎপাদন কার্যক্রম পুনরুদ্ধার এবং শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের কারণে এশিয়া সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ২০ শতাংশ বেড়ে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৭১ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ভারতে ২৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছিল ৬৪ বিলিয়ন (৬৪০ কোটি) ডলার। এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকায় কমেছে সবচেয়ে বেশি ৪৩ শতাংশ। পাকিস্তানের ৬ শতাংশ কমে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২১০ কোটি ডলার।