শিরোনাম
শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে ডিজি মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার

প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট

আলী আজম

প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট

মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখতে ডোপ টেস্ট অত্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা বলে মনে করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার। তিনি বলেছেন, আমরা মাদকের চাহিদা কমাতে চাই। ইতিমধ্যেই ডোপ টেস্ট বিধিমালা মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। ডোপ টেস্টের পরিধি বাড়ানো যেতে পারে। গাড়িচালক, চাকরিতে প্রবেশকারী এবং প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করা যেতে পারে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির ওপর ভিত্তি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ ও প্রয়োজনের কথাও জানান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, মাদক এদেশে উৎপাদন হয় না। এটি বাইরের দেশ থেকে আসছে। অনেক সময় মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি) এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মাদক প্রতিহত করতে ডিএনসির প্রতিটি সদস্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। আশা করছি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে দ্রুতই অস্ত্র সংযোজন হবে। ডিএনসি কর্মকর্তাদের অস্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। দেশের সব বন্দরে পর্যায়ক্রমে ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের চেষ্টা চলছে। মাদকের চালান রোধে বাংলাদেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলো স্ক্যানার ব্যবহার করছে। দেশের সব বন্দরে আর্চওয়ে ও ড্রাগ ডিডেকটিং স্ক্যানার স্থাপন প্রক্রিয়াধীন। অনলাইনে গোপন যোগাযোগের কৌশল হিসেবে ডার্কনেটও ব্যবহার করছেন মাদক কারবারিরা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে সাইবার ও নৌ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, মোবাইল ট্রাকিং সুবিধা নিশ্চিতসহ লোকাল ট্রাকার সংযোজন জরুরি হয়ে পড়েছে। এই লোকাল ট্রাকার ব্যবহার করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোকেনসদৃশ ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম এমফিটামিন পাউডার নামক নতুন মাদক জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক দাম ছিল ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ ঘটনায় জড়িত ১০ আসামির মধ্যে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, লকডাউনে মাদকের ব্যবহার বাড়েনি। ২০১৯ সালে মাদকের মামলা ছিল ১৭ হাজার ৩০৫টি। সেখানে ২০২০ সালে লকডাউনের মধ্যেও মাদকের মামলা ১৭ হাজার ৩০৪টি। লকডাউনে মানুষ ঘরে বন্দীদশার মতো থাকার কারণে অনেক সময় হতাশায় ভোগে মাদক সেবন করছে বা মাদকে জড়িয়ে যাচ্ছে। অনলাইন বা অন্য কোনো প্ল্যাটফরমে তারা মাদক খুঁজছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে ৩০ হাজার ৯০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রামে আধুনিক টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বাজারে নতুন মাদক সম্পর্কে মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস এবং এলএসডি শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এই দুটি অনেক দামি মাদকও বটে। ২০১৯ সালে ৫৬১ গ্রাম আইসসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০২১ সালে ২ কেজি ২০০ গ্রাম আইসসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এলএসডি হ্যালুসিনেজিক ড্রাগও। এলএসডি নেওয়ার পর সাধারণত মানুষ হ্যালুসিনেট করে বা এমন দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই। অনেক সময় অলীক দৃশ্য দেখার কারণে মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা থেকে ইয়াসের রিদওয়ান আনানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম এলএসডির সন্ধান মেলে। এরপর চলতি বছরে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় এলএসডির বিষয়টি সামনে আসে। এলএসডির সঙ্গে জড়িত একাধিক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৮ সালে নতুন আরেকটি মাদক খাত চিহ্নিত করা হয়। ওই সময়ে ২ হাজার ৫৪২ কেজি ৮৫ গ্রাম খাতসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে এ বিষয়ে তৎপরতার কারণে খাত চোরাচালান এই সিন্ডিকেটকে উৎখাত করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় আইস, এলএসডি ও খাত নামক মাদক অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, মাদকে অর্থলগ্নিকারী, গডফাদার ও পৃষ্টপোষকতাকারী এবং মাদক ব্যবসায়ী যে হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে তার কোনো পরিচয় দেখা হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০২১-এ এবারের স্লোগান ‘মাদক নিয়ে হই সচেতন, বাঁচাও প্রজন্ম বাঁচাও জীবন’। এই ঘোষণা বাস্তবায়ন এবং মাদক নিয়ন্ত্রণে আনতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কাউকে ছাড় দেবে না। মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, কাস্টমস, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সহযোগিতা করছে। এসব বাহিনীর প্রত্যেকটি সদস্য নিজ নিজ জায়গা থেকে মাদক নির্মূলে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ খবর