সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

এক দিনে ১৫৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ড

শনাক্ত ৮৬৬১, আক্রান্তদের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি- আইইডিসিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দিনে ১৫৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ড

করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত এক দিনে দেশে সর্বোচ্চ ১৫৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে ভেঙে গেছে এক দিনে সর্বাধিক মৃত্যুর আগের রেকর্ডটি। একই সঙ্গে মোট মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ১৫ হাজার। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হারও গত ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৩৩৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই সময়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৬৬১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ হাজার ৮৭৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৮ হাজার ৬৬১ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৮.৯৯ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি শনাক্তের হার ছিল শুধুমাত্র গত বছরের ৩ আগষ্ট। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৯১৭ জন। নতুন করে ১৫৩ জনের প্রাণহানি হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৫ জনে। গতকাল পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯৭ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৬ জন পুরুষ ও ৫৭ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে ১৪১ জন ও বাড়িতে ২২ জন মারা গেছেন। ৩ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। টানা অষ্টম দিনের মতো গত ২৪ ঘণ্টায়ও সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এই সময়ে খুলনায় ৫১ জন, ঢাকায় ৪৬ জন, চট্টগ্রামে ১৫ জন, রংপুরে ১৫ জন, রাজশাহীতে ১২ জন, ময়মনসিংহে ৯ জন, বরিশালে ৩ জন ও সিলেট বিভাগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ৭০ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ৪৫ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ২৪ জন চল্লিশোর্ধ্ব, ১১ জন ত্রিশোর্ধ্ব ও ৩ জনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ১৬৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৪ হাজার ২০৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৩৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫৮ জনের, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ হাজার ২৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৭৩ জনের, রাজশাহী বিভাগে ৩ হাজার ৭৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৯২ জনের, রংপুর বিভাগে ১ হাজার ২৯৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৫৫৬ জনের, খুলনা বিভাগে ৩ হাজার ৬০২টি নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৩০৪ জনের, বরিশাল বিভাগে ৭২৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৪৩ জনের ও সিলেট বিভাগে ৬১৮টি নমুনা পরীক্ষায় ২২৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৪৭.১১ শতাংশ শনাক্তের হার ছিল বরিশাল বিভাগে। এছাড়া রংপুর বিভাগে ৪৩ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ৩৬.৮৯ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৩৬.২০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯.৫৭ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২৬.১১ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ২৬ শতাংশ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২৫.৫৯ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার। সারা দেশ থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে নমুনা পরীক্ষা করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মানুষকে। এছাড়া হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়ছে রোগী। করোনা রোগীর পাশাপাশি বাড়ছে উপসর্গে মৃত্যু। খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব এখনো চালু না হওয়ায় নমুনা পরীক্ষায় ভোগান্তি বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগীরা নমুনা দিলেও তার রিপোর্ট না পাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না। আবার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকে সুস্থ হলেও নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় তারাও হাসপাতাল ছাড়তে চাইছেন না। খুমেক ল্যাবে ‘জীবাণু সংক্রমণ’ ধরা পড়লে ১ জুলাই থেকে এখানে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালগুলোয় উপচে পড়ছে রোগী। এছাড়া করোনা রোগীর পাশাপাশি উপসর্গে মৃত্যু বাড়ছেই। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গেল ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। ১০ জন ভর্তি ছিলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। হাসপাতালের ৪০৫টি কভিড শয্যার বিপরীতে গতকাল ভর্তি ছিলেন ৪৮৫ জন।

কভিড আক্রান্তদের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি -আইইডিসিআর : বর্তমান দেশে কভিড-১৯ সংক্রমণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সুস্পষ্ট প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব,  রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।  দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট মে মাসে ৪৫ শতাংশ ও জুন মাসে ৭৮ শতাংশ নমুনায় শনাক্ত হয়। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

আইইডিসিআর বলছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের  ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিকোয়েন্স করা সব নমুনায় আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। মার্চ মাসে সিকোয়েন্স করা মোট নমুনার ৮২ শতাংশ বিটা ভ্যারিয়েন্ট ও ১৭ শতাংশ আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া  গেছে। এপ্রিল মাসেও বাংলাদেশে কভিড-১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে বিটা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য ছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষায় প্রাপ্ত ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কিত তথ্য জিনোম সিকোয়েন্স এর বৈশ্বিক ডাটাবেজে জিআইএসএ আইডিতে জমা দেওয়া হয়ে থাকে। যে ধরনের ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন, তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করাই একমাত্র উপায়। এর সঙ্গে কডিড-১৯ টিকা প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর