শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

হিন্দু সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে শাহীন আনামদের বিরুদ্ধে মামলা

তদন্তে পিবিআই, ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ, ঘৃণা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের’ নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এবং ‘বাঁচতে শেখার’ নির্বাহী পরিচালক এঞ্জেলা গোমেজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আকাশ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি মামলাটি দায়ের করেন। আদালত পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে আগামী ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রণজিত চন্দ্র দে জানান, হিন্দু আইন পরিবর্তনের কথা বলে শাহীন আনাম এবং এঞ্জেলা গোমেজ বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা-সেমিনার করে আসছেন। এতে সরলমনা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্ধন্ধ, বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে হিন্দু সমাজকে বিভ্রান্ত করার মধ্য দিয়ে সরকারের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানোর পাঁয়তারাও করা হচ্ছে। এসব অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। তিনি আরও জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মহসিন অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আগামী ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর সূত্রাপুরে শাহীন আনামদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে হিন্দু সম্প্রদায়। তাঁরা শাহীন আনাম, তাঁর স্বামী মাহফুজ আনামসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে অভিযুক্তদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। এ ছাড়া এ ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন, সভা-সেমিনার করে আসছেন। হিন্দু মহাজোটের নেতারা দাবি করেছেন, আইন পরিবর্তনের নামে কৌশলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম ও তাঁর স্বামী ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐক্য ও ঐতিহ্য বিলীন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। এর মাধ্যমে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের পাশাপাশি সরকার ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানোর পাঁয়তারা চলছে বলেও অভিযোগ তাঁদের। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, শাহীন আনাম ও এঞ্জেলা গোমেজ পরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেমিনার ও অনলাইন ওয়েবিনারের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মীয় বিধিবিধান নিয়ে নানা কল্পিত উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করছেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভেদের বীজ বপন করে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উত্তেজিত করে বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি করেছেন। গত ৪ মার্চ তারা ওয়েবিনারের মাধ্যমে ‘খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ২০২০’ নামে উদ্দেশ্যমূলক একটি হিন্দু ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন তৈরি করে প্রচার করে। এতে সারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ সমাবেশসহ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, শাহীন আনাম শুধু সমাজবিরোধী কর্মকান্ড করেই ক্ষান্ত নন, তিনি নিজ সংগঠনের রীনা রায় নামে একজন কর্মীকে দিয়ে, কিছু এনজিওর সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের দিয়ে হিন্দু আইন সংস্কার করার জন্য একটি কমিটি করান। এ ছাড়া তিনি তাঁর স্বামী মাহফুজ আনাম সম্পাদিত ডেইলি স্টারে বিভিন্ন সময় কল্পকাহিনি ছাপিয়ে প্রচার করে হিন্দু ধর্মীয় বিধিবিধানের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে হিন্দু জনসাধারণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছেন। উদ্ভট তথ্য দিয়ে কল্পকাহিনি ছাপিয়ে তা দেশে-বিদেশে হিন্দু সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। মামলায় বলা হয়, শাহীন আনাম গং উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়কে আওয়ামী লীগ সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটতে তৎপর রয়েছে। তারা এমন একটি পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত, যাতে হিন্দু সম্প্রদায় আওয়ামী লীগের প্রতি নাখোশ হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে এক-এগারোর মতো অগণতান্ত্রিক সরকার তৈরির অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়। মামলার বাদী আকাশ ঘোষ বলেন, দেশে হাজার হাজার হিন্দু আইনজীবী, আইনবিদ, বিভিন্ন মঠ মন্দিরে শত শত সাধু সন্যাসী এবং হিন্দু সমাজ সেবক রয়েছেন। হিন্দু আইন বা বিধিবিধানে কোনো সমস্যা বা অসঙ্গতি হলে তা পর্যালোচনা করে দেখার জন্য পর্যাপ্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি হিন্দু সমাজে আছেন। আসামীদ্বয় হিন্দু সমাজের কেউ নন। হিন্দু বিধিবিধানের ভালো-মন্দ তাদের স্পর্শ করে না। সে কারণে হিন্দু আইন বিধিবিধান পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা সংস্কারের সুপারিশ করার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই। আইনগত অধিকারও নেই। অথচ তাঁরা হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেমিনার, ওয়েবিনার, সংবাদ সম্মেলন করে হিন্দু সমাজের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে দলাদলি সৃষ্টি করে হিন্দু সমাজকে উত্তেজিত করে তুলেছেন। দেশে বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি ঠেকাতে এবং বর্ণিত অপরাধের শাস্তি বিধান করতে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা না হলে হিন্দু সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও বিনষ্টের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর