শনিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

পুলিশ সেজে ডাকাতি করত তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার সাভার থেকে পুলিশ সেজে ডাকাতির সময় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত সাভার উপজেলার রাজাসনে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে আসল ও নকল দুটি পিস্তল, একটি গুলি, পিস্তল টাইপ লাইটার, একটি কভারসহ হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়াকিটকি, দুই সেট পুলিশ ইউনিফর্ম, পুলিশ জ্যাকেট, পুলিশ বেল্ট ও ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড জব্দ করা হয়। এ ছাড়াও দুটি রামদা, একটি ডেগার, একটি চাপাতি, দুটি ছুরি, দুটি টর্চলাইট, ৪৬৭টি ইয়াবা বড়ি, ৩০ বোতল ফেনসিডিল, দেড় কেজি গাঁজা, ৭ গ্রাম হেরোইন, ৫ লিটার চোলাই মদ, ১৯টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৪৪ হাজার ৫৭০ টাকা তাদের কাছে পাওয়া        যায়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- চক্রের হোতা শামীম রেজা, সদস্য হেলাল উদ্দিন, পারভেজ, ওয়াসিম ইসলাম, নাইম খান ও ফেরদৌস আহমেদ রাজু। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, শামীম রেজা কিশোর বয়স থেকেই অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তিনি গ্রামের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ২০০৫ সালে ঢাকায় আসেন। এক পর্যায়ে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে মাদক কারবারিদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে একটি ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলেন। এই ডাকাত চক্র রাতের আঁধারে পুলিশের ভুয়া ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় টর্চলাইট দিয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল এবং দামি জিনিসপত্র লুটপাট করত।

শামীম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছেন, তার ২৫ থেকে ৩০টি অটোরিকশা আছে। তার নামে অস্ত্র, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি নিজেকে পুলিশের এসআই হিসেবে পরিচয় দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, নকল আগ্নেয়াস্ত্র, নকল আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করতেন। তিনি সাভার এলাকায় একটি সক্রিয় ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলেন। বিভিন্ন সময় পুলিশ অফিসার সেজে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা ও বানোয়াটভাবে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করতেন। গ্রেফতার সবার নামে সাভারসহ বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৪ এর সিও বলেন, শামীম রেজা একাধিকবার চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা ও মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। এরপর জামিন নিয়ে বের হয়ে এবারই প্রথম হুবহু পুলিশের ইউনিফর্ম পরে অভিনব প্রতারণায় নামেন। শুধু ইউনিফর্মই নয়, একজন পুলিশের যা যা প্রয়োজন, সবকিছুই শামীম সংগ্রহ করেছিলেন। জমিজমা সংক্রান্ত সাভার ও আশুলিয়ায় বিভিন্ন দালালি করেন। তারা দালালির জন্য তাদের দলবল নিয়ে জমিজমা দখল করেন। এ ছাড়াও পাওনা টাকা উদ্ধারেও তারা পুলিশের পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা করতেন। আর পুলিশের ইউনিফর্ম পরে ডাকাতির কাজ করা এ ধরনের কাজ আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এর আগেও ডিবি ও র‌্যাব একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছে। কারণ রাতের বেলা সড়কে পুলিশ সদস্য সেজে চেকপোস্ট বসিয়ে টহল দিলে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হবে। তবে এ ধরনের প্রতারণা যে বা যারাই করছে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হচ্ছে। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার ছয়জনের মধ্যে হেলাল গাড়িচালক, পারভেজ মেকানিক, ওয়াসিম ইলেকট্র্রিশিয়ান। বাকি দুজন সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তারা গত তিন চার বছর ধরে ডাকাতির কাজে জড়িত।

সর্বশেষ খবর