বুধবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনা ভোটে ১৩৬২ জনপ্রতিনিধি

গোলাম রাব্বানী

বিনা ভোটে ১৩৬২ জনপ্রতিনিধি

চার ধাপে ৩ হাজার ৩০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১ হাজার ৩৬২ জন জনপ্রতিনিধি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম ধাপের ১৪১ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৫৭ জন, তৃতীয় ধাপে ৫৬৯ জন এবং চতুর্থ ধাপে ২৯৫ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। এর মধ্যে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান পদে ৩০১ জন, সংরক্ষিত সদস্য ৩২৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদের ৭৩৮ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। নির্বাচনী তথ্য বিশ্লেষণে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। প্রথম ধাপে ৩৬৫ ইউপি, দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৩ ইউপি, তৃতীয় ধাপে ৯৯২ ইউপিতে ভোট হয়। এ ছাড়া ২৬ ডিসেম্বর ৮৪০ ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছে, প্রথম দফায় মোট ১৪১ জন জনপ্রতিনিধি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৭২ জন, সংরক্ষিত সদস্য ছয়জন ও সাধারণ সদস্য ৬৩ জন। প্রথম ধাপে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দফায় এ নির্বাচন হয়। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ ভোটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৩.৪৮ শতাংশ ইউপিতে জয়ী হন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন ২৪.২২ শতাংশ ইউপিতে। ওই নির্বাচনে ৩৬৫টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ২৬৯টিতে জয়ী হন। এর মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭২টি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯৭টিতে জয়ী হন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ৮৮টি ইউপিতে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি তিনটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) তিনটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি একটি করে ইউপিতে জয়ী হয়।  দ্বিতীয় ধাপের মোট ৩৫৭ জন জনপ্রতিনিধি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৮১ জন, সংরক্ষিত সদস্য ৭৩ জন ও সাধারণ সদস্য ২০৩ জন। ১১ নভেম্বর এ ধাপের ভোট হয়।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের ভোট কমেছে। দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৩টি ইউপির মধ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৪৮৫টিতে। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮১ জন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০৪ জন জয়ী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩৩০টিতে। এ ছাড়া এই ধাপে জাতীয় পার্টি ১০টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চারটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি), খেলাফত মজলিশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি একটি করে ইউপিতে জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৫৮.২৭ শতাংশ জয়ী হয়েছেন। বাকি ৪১.৭৩ শতাংশ নৌকার প্রার্থী নিজ দলের বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র (বিএনপি), অন্যান্য দলের প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন ৩৯.৫৬ শতাংশ। তাদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত নেতারাও আছেন।

তৃতীয় ধাপের মোট ৫৬৯ জন জনপ্রতিনিধি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ১০০ জন, সংরক্ষিত সদস্য ১৩২ জন ও সাধারণ সদস্য ৩৩৭ জন। ২৮ নভেম্বর এ ধাপের ভোট হয়। তৃতীয় ধাপের ১০০৮ ইউপি তফসিল হলেও মামলা ও অন্যান্য জটিলতায় নির্বাচন স্থগিত হয় ৭ ইউপির; ৯ ইউপির বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র স্থগিত রয়েছে। ফলে ১০০৮ ইউপির মধ্যে ইসি ৯৯২ ইউপির ফলাফল প্রকাশ করেছে। গত ২৮ নভেম্বর এ ধাপের ভোট হয়। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯৯২ ইউপির মধ্যে ৫২৫ ইউপিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। যা মোট ফলাফলের ৫২.৯২ শতাংশ। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪৪৬ ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন, যা ৪৪.৯৫ শতাংশ। আর জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দল জয় পেয়েছে ২১ ইউপিতে, যা ২.১১ শতাংশ। দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ৪৭.০৬ শতাংশ ইউপিতে হেরে গেছে। ইসি জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের ৫২৫ চেয়ারম্যানের মধ্যে ৯৯ জন বিনাভোটে হয়েছেন। আর স্বতন্ত্র ৪৪৬ জনের মধ্যে একজন বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ১৭ ইউপিতে চেয়ারম্যান হয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এক, ওয়ার্কার্স পার্টি এক, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এক ইউপিতে বিজয়ী হয়েছেন। দেখা গেছে, অনেক ইউপিতে জামানত হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। আবার স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরাও চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। তৃতীয় ধাপে ২১ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না।

চতুর্থ ধাপে মোট ২৯৫ জন জনপ্রতিনিধি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৪৮ জন, সংরক্ষিত সদস্য ১১২ জন ও সাধারণ সদস্য ১৩৫ জন। ২৬ ডিসেম্বর এ ধাপের ভোট হবে। এ ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৪ হাজার ৫২৯ জন। সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ হাজার ৬২০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩১ হাজার ৫৮০ জন।

সর্বশেষ খবর