মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ভোট ভালো হয়েছে, ইভিএম নিয়ে খটকা

জিন্নাতুন নূর

ভোট ভালো হয়েছে, ইভিএম নিয়ে খটকা

বদিউল আলম মজুমদার

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ভোট ভালো হয়েছে। তবে ইভিএম নিয়ে ‘খটকা’ আছে। তিনি বলেন, আমরা জানি না নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে কারসাজি হয়েছে কি না। আমার মনে হয় না এটা হয়েছে। তবে এই ইভিএম নিকৃষ্টমানের। এই ইভিএম যখন কেনা হয় তখন প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি কমিটি হয়েছিল। তিনি কিন্তু এই ইভিএম কেনার পক্ষে যে সুপারিশ তাতে স্বাক্ষর করেননি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সুজন সম্পাদক। তিনি বলেন, আমাদের যে ইভিএম, তাতে কোনো পেপার ট্রেইল নেই। আমাদের এই ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতি করা যায় এবং এটি অডিট করার কোনো সুযোগও নেই। এমনকি ভারতেও এই ধরনের ইভিএম। যদিও সেখানে বায়োম্যাটিক্স নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই সেখানে ইভিএমে পেপার ট্রেইল যুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য আমাদের যে ইভিএম আছে সেটি ব্যবহার করা উচিত নয়। আর আমাদের আরেকটি অভিজ্ঞতা হলো, যেখানে ক্ষমতা বদলের সম্ভাবনা থাকে সেখানে দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন আমরা যতটা দেখেছি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নিঃসন্দেহে এতে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ তার ঐতিহ্য রক্ষা করেছে। তবে এটিই শেষ কথা নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার যে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে সেখানে সরকারকে বিশ্বাস করা যায়। সরকার এই নির্বাচনে কোনোরকম হস্তক্ষেপ করেনি। কোনো প্রভাব ফেলার চেষ্টাও করেনি। আমরা অতীতে দেখেছি ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার সবগুলোই সুষ্ঠু হয়েছিল এবং ক্ষমতাসীন দল ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল। তখন তারা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যে, সরকারকে বিশ্বাস করা যায় এবং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে তারা অঙ্গীকারও করেছিল যে, নিয়ম রক্ষার নির্বাচন শেষ হলে তারা সবাইকে নিয়ে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করবে। কিন্তু সেসব অঙ্গীকারের কোনোটিই রক্ষা করা হয়নি। অর্থাৎ আমাদের অতীতেও এসব বার্তা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু এগুলো বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি।

সুজন সম্পাদক আরও বলেন, সরকার নারায়ণগঞ্জে যেটি করেছে তা অনেকটা চাপে পড়ে করেছে এবং তাদের এখানে ঝুঁকিও কম ছিল। এই চাপ হচ্ছে বহির্বিশ্বের চাপ। বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং আমাদের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ডেমোক্রেসি সামিটে নিমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টিও ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। এর বাইরে নির্বাচন কমিশনের বিতর্কিত কর্মকান্ড, নিয়োগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এগুলো নিয়েও সরকার চাপে আছে। সব মিলিয়ে সরকার মনে করেছে যে নারায়ণগঞ্জে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে চাপমুক্ত হতে পারবে। একই সঙ্গে সরকারের এখানে কোনো ঝুঁকিও ছিল না। কারণ ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী একজন তারকা প্রার্থী। তিনি অতীতে নৌকা প্রতীক ছাড়াও নির্বাচনে জিতেছেন। এ জন্য সরকার হস্তক্ষেপ না করলেও আইভী নির্বাচনে জিতে আসতে সক্ষম। বলা যায়, সরকার জেনেশুনেই নারায়ণগঞ্জের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ভবিষ্যৎই বলে দেবে মানুষ এই বার্তা কীভাবে গ্রহণ করবে।

সর্বশেষ খবর