যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার বাংলাদেশের র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র দফতরে চিঠি দিয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের এক সদস্য। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের কাছে এ চিঠিটি দিয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেক। গত বৃহস্পতিবার চিঠিটি দেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে স্লোভাকিয়া থেকে নির্বাচিত স্টেফানেক। চিঠির কথা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের একজন এমপি একটি মাত্র চিঠি লিখেছেন। এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে, ভবিষ্যতেও হয়তো ঘটবে। বাস্তবতা হলো, এর বিন্দুমাত্র কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দীর্ঘ ও গভীর সম্পর্ক এবং সম্পৃক্ততা আছে। এতে কারও লবিংয়ের কারণে এমন বিচ্ছিন্ন কিছু প্রভাব ফেলতে পারবে না। ইভান স্টেফানেক তাঁর চিঠিতে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধানকে লিখেছেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের অমানবিক আচরণ দেখা গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্বাচনের ফল পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন। চিঠিতে আরও বলা হয়, এ পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই মারাত্মক। কারণ মার্কিন সরকার বর্তমান পুলিশের আইজি যিনি আগে র্যাবের প্রধান ছিলেন তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয় উল্লেখ করে ইভ্যান স্টেফানেক চিঠিতে উল্লেখ করেন, র্যাব কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা চালিয়ে আসছে। মানবাধিকার সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররাও দীর্ঘদিন ধরে র্যাবকে নিষিদ্ধের দাবি উত্থাপন করে আসছিলেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালে টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর আকরামুল হককে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যার মধ্য দিয়ে বিষয়টির গুরুত্ব সামনে আসে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটসের বিবৃতি উদ্ধৃত করে ইভান স্টেফানেক চিঠিতে লিখেছেন, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ১ হাজার ১৩৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে এ নির্যাতনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্টেফানেক আরও লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং পুলিশের ওপর ভর করে পরিচালিত হচ্ছে সরকার। চিঠিতে স্টেফানেক উল্লেখ করেন, ২০২৬ সালের মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে উন্নতি ঘটবে বাংলাদেশের। পাশের অনেক দেশকে পেছনে ফেলছে এ দেশটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, দেশটির এ উন্নতির সঙ্গে চিহ্নিত হয়ে আছে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতি।
এর আগে, ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাব-পুলিশের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দফতর। নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) বরাত দিয়ে মার্কিন রাজস্ব দফতর বলে, র্যাবের বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬০০টির বেশি গুম, ২০১৮ সাল থেকে ৬০০ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আইনের শাসনের প্রতি অবজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ ও বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হুমকির মুখে ফেলছে। অন্যদিকে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে জাতিসংঘ আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাকোঁয়ারকে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক ১২টি মানবাধিকার সংস্থা। ২০ জানুয়ারি এ চিঠির তথ্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে চিঠিটি জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারিকে পাঠানো হয়েছে গত বছরের ৮ নভেম্বর। তবে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ চিঠির আনুষ্ঠানিক কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি।