শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
পাচারের টাকায় আমেরিকায় বাড়ি করার অভিযোগ

এস কে সিনহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এস কে সিনহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অবৈধ কৌশলে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ উপপরিচালক (গুলশান) আনোয়ার প্রধান মামলাটি করেন। এ ব্যাপারে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় কমিশনের সিদ্ধান্তে দুদক মানি লন্ডারিং আইনে মামলাটি করেছে। এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অর্জিত অর্থ হুন্ডিসহ  বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে ছোট ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি এলাকায় ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার নগদ প্রদান করে বাড়ি কেনেন; যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ হওয়ায় মামলা রুজু করা হয়। তিনি বলেন, কী প্রক্রিয়ায় আসামি বিদেশে টাকা পাচার করেছেন তা দুদক অধিকতর তদন্ত করে বের করবে। তদন্তকাজ সম্পন্ন হলেই কেবল কী পরিমাণ অর্থ কীভাবে পাচার হয়েছে তা জানা যাবে। মামলার এজাহারসূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলারে (৮৬ টাকা ডলার হিসাবে বাংলাদেশি টাকায় ২ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার) সিনহার জন্য তিন তলা একটি বাড়ি কেনেন তার ভাই অনন্ত কুমার। বাড়িটি কেনার আগে ৩০ বছরের কিস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে অনন্ত নিজের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ডলার ব্যাংকঋণ নিয়ে আরও একটি বাড়ি কিনেছিলেন। পেশায় ডেন্টিস্ট অনন্ত কুমার প্রথম বাড়িটি ৩০ বছরের কিস্তিতে কিনলেও নিজের ভাইয়ের জন্য বাড়ি কিনেছেন নগদ টাকায়। আরও জানা যায়, ২০১৮ সালে অনন্ত কুমার সিনহার নিউজার্সির প্যাটারসনে অবস্থিত ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি হিসাবে ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৬০ হাজার ডলার জমা হয়। ওই একই হিসাবে অন্য একটি উৎস থেকে একই বছরের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। এস কে সিনহার বাড়ি কেনার বা বিদেশে অর্থ পাচারে বৈধ কোনো উৎসের সন্ধান পায়নি সংস্থাটি। দুদক-সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করেন এস কে সিনহা বিভিন্ন সময় ঘুষ হিসেবে যেসব টাকা গ্রহণ করেছেন তা বিদেশে পাচার করেছেন। দুদক তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ আনবে। এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের প্লট বরাদ্দ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এস কে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এস কে সিনহা তার নিজ নামে রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে একটি প্লট বরাদ্দ পান। পরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ও প্রতারণার মাধ্যমে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে ৩ কাঠার আরও প্লটের জন্য আবেদন করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাইয়ের নামে আবেদন করা ওই ৩ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পরে ৩ কাঠার প্লটটিকে আবারও প্রভাব খাটিয়ে ৫ কাঠার প্লটে রূপান্তর করার অভিযোগ আছে সিনহার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সাবেক ফারমার্স ব্যাংক বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের মামলায় আলাদাভাবে এস কে সিনহাকে চার বছর এবং সাত বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।

সর্বশেষ খবর