শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
ওয়াশিংটনে নিরাপত্তা সংলাপ

অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা সংলাপে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আগের তুলনায় দাম কমিয়ে বিক্রির। আর কিনতে প্রয়োজনে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে দেশটি। বুধবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ প্রস্তাবের প্রতিউত্তরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। লম্বা সময় নিয়ে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে আরও অন্য বিষয়ের পাশাপাশি র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার। বৈঠকসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকের পর ওয়াশিংটন দূতাবাস থেকে জানানো হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার-সেক্রেটারি অব স্টেট ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাম্বাসাডর বনি ডেনিস জেনকিন্স ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী সংলাপে নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার প্রমুখ। মার্কিন পক্ষের অন্যদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করেন সহকারী সচিব জেসিকা লুইস ও ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কেলি কেইডারলিং। দূতাবাস জানায়, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সহায়তা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ প্রকাশ এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মতি প্রদানের মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা সংলাপ শেষ হয়েছে। উভয় পক্ষ দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ‘মৌলিক চুক্তি’ জেনারেল সিকিউরিটি অব মলিটিারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) ও একুইজিশন ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট (এসিএসএ)-এর মতো প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেছে। বাংলাদেশ পক্ষ র‌্যাব এবং এর কিছু বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মার্কিন পক্ষকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে এবং কর্মীরা কোনো দায়মুক্তি ভোগ করে না উল্লেখ করে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা কীভাবে অযৌক্তিক তা-ও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে। উভয় পক্ষ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে এবং এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ঢাকা ওয়াশিংটনের সঙ্গে তার অংশীদারিকে গভীর মূল্য দেয়। মার্কিন প্রতিনিধি দল দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্কের প্রশংসা করে। মার্কিন পক্ষ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্য ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে আবিভূত হয়েছে এবং বৈশ্বিক সংকট ও সমস্যা সমাধানে অংশ নিচ্ছে। দুই দেশ সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনে দৃঢ় সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে যখন মার্কিন পক্ষ বাংলাদেশে সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলায় আইন প্রয়োগ ও বিচারিক সক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। সংলাপে সামরিক প্রশিক্ষণ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সক্ষমতা উন্নয়ন, রোহিঙ্গা, ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো আঞ্চলিক সমস্যা এবং বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমর্থন প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে এবং ধন্যবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংকল্পের প্রশংসা করেছে এবং মার্কিন পক্ষকে ফলোআপ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকা-নিউইয়র্ক ডাইরেক্ট ফ্লাইট দ্রুত পুনরায় চালুর লক্ষ্যে উভয় পক্ষ বিমান নিরাপত্তায় সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করেছে। বাংলাদেশ কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত জোরালো সমর্থনের প্রশংসা করেছে। পরবর্তী নিরাপত্তা সংলাপ আগামী বছর ঢাকায় হবে। এর আগে (২০১২ সাল থেকে) মোট সাত দফা সংলাপ হয়েছে, তবে তা ছিল মহাপরিচালক পর্যায়ের। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে এবারই প্রথম নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হলো। সূত্র বলছেন, ২০ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক ফোরাম ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগ’-এ মার্কিন নিরাপত্তা সরঞ্জাম সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশ পেতে পারে এমন ইঙ্গিত মিলেছিল। এবার নিরাপত্তা সংলাপে এ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর