শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

কলকাতায় আটকা ১৫ বাংলাদেশি নাবিক

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

এক মাস ধরে কলকাতায় অবরুদ্ধ হয়ে আছেন বাংলাদেশি জাহাজ ‘মেরিন ট্রাস্ট-০১’-এর ১৫ ক্রু। কলকাতা বন্দরসংলগ্ন মেরিন ক্লাব হোটেলে তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। নাবিকদের অভিযোগ, তাঁদের দেশে ফিরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি মালিক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মেরিন ট্রাস্ট কোম্পানির পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় এজেন্ট বেঙ্গল শিপিং লিমিটেড তাঁদের পাসপোর্ট জব্দ করেছে। এ বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থভাবে নিজেদের দেশে ফিরতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌপরিবহন মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা। এদিকে বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তরফে ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ডিজি শিপিংকে লেখা এক ইমেল চিঠিতে ওই ১৫ ক্রুকে প্রত্যাবাসনের আরজি জানানো হয়েছে। চিঠিতে দুই দেশের উপকূলীয় চুক্তি অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের দেশে ফেরানোর আবেদন করা হয়েছে। অন্যদিকে কলকাতার ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর’ (এসএমপি)-এর সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মুখার্জি এক বিবৃতিতে জানান, ১৫ ক্রু মেরিন ক্লাবে নিরাপদে অবস্থান করছেন। জানা গেছে, ২০ মার্চ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয় ‘মেরিন ট্রাস্ট-০১’ জাহাজটি। ২৩ মার্চ কলকাতা বন্দরে পৌঁছে পণ্য খালাস করে। পরদিন কলকাতা বন্দর থেকে ফের পণ্য বোঝাইয়ের সময় কনটেইনারের বাড়তি ওজনের কারণে জাহাজটি কাত হয়ে ডুবতে শুরু করে। দ্রুত নেমে পড়ায় বেঁচে যান নাবিক, প্রকৌশলীসহ ১৫ ক্রু। সরিয়ে ফেলা হয় বেশ কিছু কনটেইনার। এতে পুরোপুরি ডুবে যাওয়া থেকে জাহাজটি রক্ষা করা সম্ভব হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাহাজের ১৫ ক্রুকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় মেরিন ক্লাব হোটেলে।

এসএমপির সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মুখার্জি প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে জানান, ক্রুদের অপরিকল্পিতভাবে কনটেইনার বোঝাই করার কারণে কলকাতা বন্দরের ‘নেতাজি সুভাষ ডক’ (এনএসডি)-এ ডুবে যায় বাংলাদেশি জাহাজটি। ফলে বন্দরের ৫ নম্বর বার্থও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘২৪ মার্চ এসএমপি ডকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে এবং সেই থেকে ওই ডুবন্ত জাহাজটির সুরক্ষার জন্য তার মালিক একবারের জন্যও বন্দরে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। এ ছাড়া ওই জাহাজটির উদ্ধারকাজ চালানের জন্য যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেটিও ‘হাল অ্যান্ড মেশিনারি’ বা ‘পি অ্যান্ড আই ক্লাব’ বীমা প্রদানকারী সংস্থার স্বীকৃতপ্রাপ্ত নয়। বর্তমানে ওই উদ্ধারকারী দল তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এবং ডুবে যাওয়া অবস্থায়ই ওই জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা দিয়েছে। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে নেতাজি সুভাষ ডক। ওই ডকের ৫ নম্বর বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রতিদিন ৪০ লাখ রুপি করে রাজস্ব হারাচ্ছে তারা।

বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ইমেল চিঠিতে আরও জানানো হয়, ‘ওই দুর্ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তরফে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখবেন।’

এর আগে বন্দিদশা অবস্থায় সহকর্মীদের নিয়ে একটি ভিডিওবার্তা পোস্ট করেন জাহাজটির মুখ্য প্রকৌশলী ফাহিম ফয়সাল। বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা ১৫ জন ক্রু একসঙ্গে সমবেত হয়েছি। ২৪ মার্চ আমাদের জাহাজ কলকাতা বন্দরে ডুবে যায়। এরপর কলকাতা পোর্ট অথরিটি আমাদের মেরিন ক্লাব হোটেলে অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রায় এক মাস ধরে ওই হোটেলেই অবরুদ্ধ আছি।’

বাংলাদেশি ক্রুদের আরও অভিযোগ, তাঁদের সবার পাসপোর্ট এখানকার স্থানীয় এজেন্ট বেঙ্গল শিপিং লিমিটেড জব্দ করে রেখেছে। পাশাপাশি পুলিশি ঘেরাও দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর