মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদেশি দায়দেনায় অস্বস্তিকর অবস্থানে যেতে পারে দেশ

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশি দায়দেনায় অস্বস্তিকর অবস্থানে যেতে পারে দেশ

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বড় অঙ্কের অনেক ঋণের গ্রেস পিরিয়ড দু-এক বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমানে অপেক্ষাকৃত উচ্চ সুদের অনেক ঋণ পরিশোধও করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পর বিদেশি দায়দেনায় অস্বস্তিকর অবস্থানে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ। গতকাল সরকারি দায়দেনা সংক্রান্ত এক অনলাইন আলাপচারিতায় (সংলাপ) এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় এ সংক্রান্ত একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনও প্রদান করেন দেবপ্রিয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিপিডি। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির আরেক সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ও দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ কি শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থায় চলে যাবে? এ বিষয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এটা আমি মনে করি না। একেক দেশের সংকট একেক রকম। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সংকটকে মেলানো যায় না। আমি মনে করি না যে, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে। প্রসঙ্গক্রমে দেবপ্রিয় বলেন, রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের কারণে কীভাবে সরকারি দায়দেনার এক চরম নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তা আপনারা দেখতে পারছেন শ্রীলঙ্কায়। পেছনে তাকালে দেখা যাবে প্রায় একই কারণে পাকিস্তান, নেপাল, ঘানাসহ আরও অনেক দেশেই এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এসব দেশে মূলত রাজনৈতিক সংকটটাই অর্থনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। দেবপ্রিয় বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পরে বিদেশি দায়দেনায় অস্বস্তিকর অবস্থানে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ সবুজ (স্বস্তিকর) অবস্থানে আছে। এটি ধীরে ধীরে হলুদ অবস্থানে (অস্বস্তিকর) যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আপাতঃ স্বস্তি নাও থাকতে পারে। এখন আমরা বিদেশি দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে বেশি মূল্যে বেশি ঋণ করছি। যেমন চীন, রাশিয়া ও ভারত। এসব দেশের ঋণের রেয়াতি সময় (গ্রেস পিরিয়ড) শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সরবরাহকারী ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, আমরা বহুপক্ষীয় উৎসের বদলে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছি। অথচ পাইপলাইনে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো সাশ্রয়ী ঋণ ব্যবহার করতে পারছি না।

তিনি বলেন, কম রাজস্ব আহরণ, অভ্যন্তরীণ সম্পদের সংকট এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনেদনে সংকট হলেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে বেশি ঋণ করলে এবং বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলেও এমন পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে। দেবপ্রিয় মনে করেন, সরকারি দায়দেনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতিতে পাঁচ ধরনের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যেমন বিনিময় হারের ঝুঁকি বাড়ছে, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হার বাড়ছে, বিদেশি ঋণের সুদের হার বাড়ছে, উচ্চমূল্যে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে ও প্রকল্পের অর্থনৈতিক সুবিধা হ্রাস পাচ্ছে। তাঁর মতে, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে তুলনামূলক বেশি সুদে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গত তিন বছরে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি দুই উৎস থেকেই ঋণ নেওয়া বেড়েছে। আবার বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনের আগের বছর, নির্বাচনের বছর ও পরের বছর ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। দেশের দায়দেনা পরিস্থিতি ব্যাখ্যায় নির্বাচনী চক্র সূচক হিসেবে উঠে আসছে। এই অর্থনীতিবিদ তাঁর প্রেজেন্টেশনে বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের সার্বিকভাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে সরকারি দায়দেনা ৪৪ দশমিক ১০ শতাংশ। মাথাপিছু সরকারি দায়দেনা ৪৩২ ডলার। তিনি মনে করেন, সরকারি ঋণ পরিশোধসহ সার্বিক দায়দেনায় পূর্ণাঙ্গ হিসাব করতে হলে বিদেশি ঋণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ঋণ, ব্যক্তি খাতের ঋণ, সরকারের সংযুক্ত দায়দেনাও বিবেচনায় আনা উচিত। এসব হিসাবে আনা হলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মূল্যায়ন থেকে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর