শুক্রবার, ২০ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

এক কিংবদন্তির বিদায়

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মরদেহ দাফনের জন্য আনা হবে বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

এক কিংবদন্তির বিদায়

কালজয়ী অমর একুশে গানের রচয়িতা, কিংবদন্তি সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী আর নেই। গতকাল লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪৯ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই প্রখ্যাত সাংবাদিক।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান     বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশেই গাফ্‌ফার চৌধুরীকে দাফন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, শুক্রবার ব্রিকলেন মসজিদে জুমার পর জানাজা হবে, তারপর বেলা ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত লাশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য শহীদ মিনারে রাখা হবে। সে ক্ষেত্রে শনিবার ফ্লাইট পাওয়া গেলে বাংলাদেশে লাশ পাঠানো হবে। রবিবার বাংলাদেশে লাশ পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে প্রয়াত স্ত্রীর কবরের পাশে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর কবরের জায়গা নির্ধারিত (তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী) রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর চাচাতো ভাই মিল্টন চৌধুরী।

কভিড আক্রান্ত হয়ে গত এপ্রিলের শুরু থেকে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ক্যান্সারে ভুগে লন্ডনে ১৩ এপ্রিল মারা যান তাঁর আরেক মেয়ে বিনীতা চৌধুরী। ওই সময় তিনি মেয়ের জানাজায়ও অংশ নিতে পারেননি। তিনি ছেলে অনুপম আহমেদ রেজা চৌধুরী এবং তিন মেয়ে তনিমা, চিন্ময়ী ও ইন্দিরাকে রেখে গেছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা বাঁক বদলের সাক্ষী গাফ্‌ফার চৌধুরী ছিলেন একাত্তরের মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক। ১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করলেও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে তাঁর কলম সোচ্চার ছিল বরাবর। প্রবাসে থেকেও ঢাকার পত্রিকাগুলোয় তিনি যেমন রাজনৈতিক ধারাভাষ্য আর সমকালীন বিষয় নিয়ে একের পর এক নিবন্ধ লিখে গেছেন, তেমনি লিখেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা ও প্রবন্ধ।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী মারা যাওয়ার পর লন্ডনে হাসপাতালে ভিড় করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। হাসপাতালে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মেয়ে তনিমা চৌধুরী, ইন্দিরা চৌধুরী, চিন্ময় চৌধুরী, ছেলে অনুপম চৌধুরী এসে উপস্থিত হন। এর পরই বার্নেট হাসপাতালে উপস্থিত হন ব্রিটেনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা, যুবলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জামাল খানসহ অনেকে। হাসপাতালে উপস্থিত আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর সন্তানরা বাবার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর জন্ম। হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মোসাম্মৎ জহুরা খাতুনের তিন ছেলে, পাঁচ মেয়ের মধ্যে গাফ্‌ফার চৌধুরী তৃতীয়। উলানিয়া জুনিয়র মাদরাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়ে হাইস্কুলে ভর্তি হন গাফ্‌ফার চৌধুরী। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজ থেকে পাস করেন ইন্টারমিডিয়েট। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে স্নাতক ডিগ্রি পান।

বাবার মৃত্যুর পর ১৯৪৬ সালে গ্রাম ছেড়ে বরিশাল শহরে চলে এসেছিলেন গাফ্‌ফার চৌধুরীরা। তখনই লেখালেখির শুরু। স্কুলে পড়ার সময় কংগ্রেস নেতা দুর্গামোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে তাঁর প্রথম গল্প ছাপা হয় সওগাত পত্রিকায়। পরে দৈনিক ইনসাফ, সংবাদ, মাসিক সওগাত, নকীব পত্রিকায় তিনি কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেফাকে। দুই বছর পর মানিক মিয়া তাঁর নতুন রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুক’-এর দায়িত্ব দেন গাফ্‌ফার চৌধুরীকে। সামরিক শাসন জারি হলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, দৈনিক জেহাদ, সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় বিভিন্ন পদে কাজ করেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। ১৯৫৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সেলিমা আফরোজের সঙ্গে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর বিয়ে হয়। একে একে ঘরে আসে পাঁচ সন্তান।

১৯৬৪ সালে সাংবাদিকতা ছেড়ে ব্যবসা করার চেষ্টায় ‘অনুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানা খোলেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। দুই বছর পর আবার সাংবাদিকতায় ফিরে ১৯৬৬ সালে বের করেন ছয় দফা আন্দোলনের মুখপত্র দৈনিক ‘আওয়াজ’। পরে আবার দৈনিক আজাদ হয়ে ফেরেন ইত্তেফাকে। ১৯৬৯ সালে মানিক মিয়ার মৃত্যুর পর অবজারভার গ্রুপের দৈনিক পূর্বদেশে যোগ দেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি কলকাতায় চলে যান সপরিবার। মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয় বাংলায় লিখতে শুরু করেন। কলকাতার আনন্দবাজার ও যুগান্তরেও কলাম লিখতে থাকেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দৈনিক জনপদ বের হয় গাফ্‌ফার চৌধুরীর সম্পাদনায়। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যাওয়ার সুযোগ হয় তাঁর। দেশে ফেরার পর গুরুতর অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতায় যান গাফ্‌ফার চৌধুরী। পরে ১৯৭৪ সালে স্ত্রীকে নিয়ে পাড়ি জমান লন্ডনে। ওই বছরই স্ত্রীকে হারান তিনি। তখনই তাঁদের প্রবাসজীবনের শুরু।

১৯৭৬ সালে লন্ডনে বসেই ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে বের করেন ‘নতুন দিন’। এরপর ১৯৯০ সালে ‘নতুন দেশ’ এবং ১৯৯১ সালে ‘পূর্বদেশ’ বের করেন। এ পুরোটা সময় বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোয় নিয়মিত লিখে গেছেন। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে ভীমরুল, তৃতীয় মত, কাছে দূরে, একুশ শতকের বটতলায়, কালের আয়নায়, দৃষ্টিকোণ শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন তিনি।

তরুণ বয়সে বহু কবিতা লেখা গাফ্‌ফার চৌধুরীর প্রথম বইটি ছিল শিশুদের জন্য। ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত সে বইয়ের নাম ‘ডানপিটে শওকত’। প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘কৃষ্ণপক্ষ’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে। তাঁর প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’। এ ছাড়া রয়েছে- সম্রাটের ছবি, সুন্দর হে সুন্দর, নাম না জানা ভোর, নীল যমুনা, শেষ রজনীর চাঁদ। সম্পাদনা : বাংলাদেশ কথা কয়, আমরা বাংলাদেশী নাকি বাঙ্গালী, বঙ্গবন্ধু আজ ?যদি বেঁচে থাকতেন, গান্ধীর দর্শন ও শেখ মুজিবের রাজনীতি, বাঙালির অসমাপ্ত যুদ্ধ, আমার বঙ্গবন্ধু আমার বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু : মধ্যরাতের সূর্যতাপস বিলাতের রাধা, বাংলাদেশ : বামপন্থী রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা, শেষ রজনীর চাঁদ, কালান্তরের কড়চা, হাসিনা ও রেহানা অ-রূপকথার দুইবোন, নিরুদ্দিষ্ট নয় মাস উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

তাঁর লেখা নাটকের মধ্যে রয়েছে- ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’। নিজের লেখা রাজনৈতিক উপন্যাস ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ অবলম্বনে ২০০৭ সালে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি নির্মাণ করেন ‘দুর্গম পথের যাত্রী’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী অবলম্বনে ‘দ্য পোয়েট অব পলিটিক্স’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। কিন্তু পরে তা আর এগোয়নি।

সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন গাফ্‌ফার চৌধুরী। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এ ছাড়া লন্ডনে সংহতি আজীবন সম্মাননা পদক গ্রহণের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের ফ্রিডম অব বারা (টাওয়ার হ্যামলেটস) উপাধিও পান তিনি।

রাষ্ট্রপতির শোক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অগ্রপথিককে হারাল। তাঁর একুশের অমর সেই গান বাঙালি জাতিকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তির আন্দোলনে অসীম সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছিল। তাঁর মৃত্যু দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি তাঁর কালজয়ী গান ও লেখনীর মাধ্যমে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী তাঁর মেধা-কর্ম ও লেখনীতে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন এবং বাঙালির অসাম্প্রদায়িক মননকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সমর্থন করে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’ পত্রিকায় তাঁর লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। বিদেশে অবস্থানকালে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে লেখালেখি করেছেন। সরকারপ্রধান মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

বাজুস প্রেসিডেন্টের শোক : ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর শোকবার্তায় বলেন, ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির রচয়িতা আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো শোকবার্তায় বাজুস প্রেসিডেন্ট ও দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবং আমাদের মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর লেখনী বিশেষ করে তাঁর লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গান এক অমর সৃষ্টি। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন তাঁর প্রকাশিত পত্রিকা ‘জয় বাংলা’ মুক্তিযোদ্ধাদের যথেষ্ট অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক কলমযোদ্ধাকে হারিয়েছে বলে উল্লেখ করেন বাজুস প্রেসিডেন্ট। তিনি আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোকের ছায়া : প্রবীণ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শোক জানিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাবউদ্দিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, প্রাথমিক-গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খসরু, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঢাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান। সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম এমপি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সেক্রেটারি সৈয়দ আশ্রাফুল ইসলাম নয়ন. মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আইনজীবী কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল বাহার মজুমদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিষদের আহ্বায়ক সুভাষ চন্দ বাদল ও সদস্য সচিব মো. আবু সাঈদ, জয় বাংলা সাংবাদিক মঞ্চের সভাপতি জয়ন্ত্র আচার্য ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর খান বাবু, ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সেলিম খান ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রনি, ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) সভাপতি মো. রুহুল আমিন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী ভাদুড়ী। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সহসভাপতি ডা. দিলীপ রায়, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান প্রমুখ। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন পিন্স, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

বরিশালে শোকের ছায়া : বরিশাল থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান তাঁর গ্রামের বাড়ি মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়াসহ গোটা এলাকার মানুষ। তাঁর অমর সৃষ্টিই চিরকাল তাঁকে মানুষের হৃদয়ে বাঁচিয়ে রাখবে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী মর্যাদা) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আফজালুল করিম, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নজমুল হোসেন আকাশ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বরিশাল সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি কাজল ঘোষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের শোক : আমাদের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি জানান, আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত বিশিষ্টজনরা। শোক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. খন্দকার মনসুর, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের মিয়া এবং কম্যুনিকেশন্স ডাইরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী, আমেরিকা-বাংলাদেশ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট এম এ সালাম, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুব্রত তালুকদার, ফোবানার সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, মাহাবুব রেজা রহিম এবং বেদারুল ইসলাম বাবলা, মানবাধিকার সংগঠক শিতাংশু গুহ, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক রহিম র‌্যা নিহাল, কমিউনিটি লিডার মোমিনুল হক বাচ্চু, জুনায়েদ আকতার প্রমুখ।

তখনই চলে গেলেন যখন তাঁর প্রয়োজন সর্বাধিক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর