রবিবার, ২২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে বন্দরে বাড়তি সতর্কতা

♦ ছড়িয়েছে ১১ দেশে শনাক্ত ৮০ জনের দেহে, প্রাণঘাতী নয় ♦ সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ♦ গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে বন্দরে বাড়তি সতর্কতা

বিশ্বের ১১ দেশে ৮০ জনের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক এই রোগ। দেশে মাঙ্কিপক্স রোগের জীবাণু প্রবেশ ঠেকাতে বন্দরগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে এই রোগের উপসর্গ আছে এমন রোগী শনাক্ত হলে আইসোলেশনে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ও মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ     প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাঙ্কিপক্সের বিস্তার নিয়ে আমরা নজর রাখছি। সব বন্দরে বাড়তি সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে। মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ আছে এমন রোগী পেলে তাদের আইসোলেশনে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ রোগের রোগী শনাক্ত করোনার চেয়ে সহজ। কারণ কেউ আক্রান্ত হলে প্রথমে তার শরীরে পক্স দৃশ্যমান হবে। মানুষ আক্রান্ত হলে উপসর্গ দৃশ্যমান হওয়ার পরে এ রোগ ছড়ায়। কিন্তু করোনা উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও রোগ ছড়াত।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাঙ্কিপক্স নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এটা গুরুতর কিংবা প্রাণঘাতী নয়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’  জানা যায়, চলতি মাসেই উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে কয়েকজন মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে, কিছু ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্স মারাত্মক হতে পারে। যদিও তা বিরল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশে হাজার হাজার মানুষের মাঝে এই রোগের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকাতে এটি বিরল। কিন্তু ফ্রান্স গত শুক্রবার মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত করেছে। মাঙ্কিপক্স এমন একটি ভাইরাস যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়। এর উপসর্গ গুটিবসন্তের মতো হলেও ক্লিনিক্যালি কম গুরুতর। আফ্রিকায় কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ায় শিকারি ইঁদুর, ডর্মিসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বানরসহ অনেক প্রাণীর মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানুষ থেকে মানুষে এই রোগের সংক্রমণ সীমিত। মাঙ্কিপক্সের আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গের মধ্যে আছে- মুখ ও হাতের তালুতে ক্ষত বা গুটি, খোসপাঁচড়া, জ্বর, পেশিতে ব্যথা এবং ঠাণ্ডা লাগা। ১৯৭০ সালে জায়েরে (বর্তমানে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র) মানুষের প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। তখন সেখানের একটি অঞ্চলের ৯ বছর বয়সী ছেলের মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া যায়। ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১টি আফ্রিকান দেশ- বেনিন, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, গ্যাবন, আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিয়েরা লিওন এবং দক্ষিণ সুদানে মানুষের মাঝে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। ২০০৩ সালের বসন্তে যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। যা ছিল প্রথমবারের মতো আফ্রিকার বাইরে কোনো দেশে এই রোগের সংক্রমণ। সংক্রামিত প্রাণীর রক্ত, শারীরিক তরল, ত্বকের ক্ষত বা শ্লেষ্মার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ফলে প্রাণী থেকে মানুষের মাঝে এই রোগ ছড়ায়। সংক্রামিত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভিতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায়। শ্বাসযন্ত্রের ড্রপলেটের মাধ্যমে সংক্রমণে সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী ফেস টু ফেস যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। যা স্বাস্থ্যকর্মী, পরিবারের সদস্য এবং সংক্রামিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠদের যোগাযোগকে বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। সাধারণত এই রোগের উপসর্গ দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি গুরুতর হতে পারে। কারণ, ভাইরাস এক্সপোজারের মাত্রা রোগীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং জটিলতার ধরনের সঙ্গে সম্পর্কিত। রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক সাইমন ক্লার্ক বলেন, আমাদের অনুমান- পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেন যা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে আছে সেখানে মৃত্যুর হার প্রায় এক শতাংশ। কঙ্গো অঞ্চলে এমন একটি স্ট্রেন পাওয়া যায় যা প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে এই স্ট্রেন নেই। এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে, গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু, গুটিবসন্তের ভ্যাকসিনের সরবরাহ এখন সীমিত। কারণ বিশ্বব্যাপী এই রোগটি নির্মূল হয়েছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর