বুধবার, ১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

যুগপৎ আন্দোলনে ঐকমত্য বিএনপি ও গণসংহতির

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে ‘যুগপৎ ধারা’য় আন্দোলনে একমত হয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপে বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি, বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ সংবিধানের মৌলিক সংশোধনসহ নানা বিষয়েও আলোচনা হয়। সংলাপে মহাসচিবের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন। অপরদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে অংশ নেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, মুনির উদ্দিন পাপ্পু, হাসান মারুফ রুমি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইমরাদ জুলকার নাঈন, বাচ্চু ভুঁইয়া, জুলহাস নাইন বাবু, দীপক রায়, কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান ও আলিফ দেওয়ান। সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। একটা গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের সব মানুষকে একতাবদ্ধ করব। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ করে এই সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা একমত হয়েছি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আলোচনায় মৌলিক কোনো মতভেদ দেখিনি। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের নামের বিষয়ে মতভিন্নতা থাকতে পারে, অন্তর্বর্তীকালীন না নিরপেক্ষ সরকার। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আলোচনায় আমরা ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে ঐকমত্য হয়েছি যে, যুগপৎ ধারায় আন্দোলন যার যার অবস্থান থেকে পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, যদি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে একটা জাতীয় রূপরেখা আসে তাহলে জনগণ নতুন করে আন্দোলিত হবে। একটা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারব। জোনায়েদ সাকি বলেন, যারাই ক্ষমতায় থাকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এই বিষয়ে সমাধান করতে আমরা সংবিধান সংস্কারের সুনির্দিষ্ট কতগুলো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন আমরা মনে করি, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে, নিম্ন আদালতকে উচ্চ আদালতের অধীনস্থ করতে হবে। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি করতে হবে এবং জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘন করার কোনোরকম তৎপরতা কিংবা কোনোভাবেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা, সব সাংবিধানিক পদে সাংবিধানিক কমিশনের মধ্য দিয়ে নিয়োগ, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, নিম্ন কক্ষ ও উচ্চ কক্ষ গঠন সংসদে, প্রদেশ ব্যবস্থা সামনে নিয়ে আসা এবং সব অগণতান্ত্রিক আইন বাতিল করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কিংবা আরপিও এসব আইন যেগুলো যা জনগণের ওপর নিপীড়নকারী তা বাতিল করার কথা বলেছি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরও বলেন, কতগুলো মৌলিক বিষয় এদেশের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন যে কথাগুলো গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বলেছেন। গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সংবিধানের পরিবর্তন এবং কতগুলো মৌলিক বিষয় আছে তার পরিবর্তন প্রয়োজন। আমরাও মনে করি তা অত্যন্ত জরুরি। সেটা আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।

সর্বশেষ খবর