মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ফের বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত

গত বছর সাড়ে ১৬ লাখ টনের অনুমতি দিলেও এসেছিল মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টন

উবায়দুল্লাহ বাদল

গত বছর জুলাই-আগস্টে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে মোট সাড়ে ১৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। শুল্ক কমিয়ে এসব চাল আনতে ৪ শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তারা মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টন চাল আনতে পেরেছিল। কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা লোকসান এড়াতে ব্যবসায়ীরা সেই সময় আমদানিতে অনাগ্রহ দেখান। সরকারের ওই উদ্যোগ অনেকটাই ভেস্তে গিয়েছিল। এবারও চালের বাজারের পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে খারাপ। এবারও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে

বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গতকাল খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সরকারের এ উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলেছেন চালের বাজার বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা ভরা মৌসুমে চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খোদ সরকারের খাদ্য ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন। তাদের মতে, ভরা মৌসুমে কোনো অবস্থাতেই চালের দাম বাড়তে পারে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ও বাজারের চালের সরবরাহ বাড়াতে অবশ্যই চাল আমদানি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে চালের দাম লাগামহীন হয়ে উঠেছে এটা খুবই দুঃখজনক। এমন পরিস্থিতিতে চাল আমদানি করতেই হবে। কিন্তু বোরোর ভরা মৌসুমে এমন সিদ্ধান্ত একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বাজারে নতুন চাল না আসায় চালের দাম কমছে না। মিল মালিকরা যে বাজারে চাল ছাড়ছেন না সেটা মন্ত্রী নিজেই বলেছেন। এ বিষয়টা মন্ত্রণালয় বাজার তদারকির মাধ্যমে কেন আগে বুঝতে পারল না। চালের দাম বৃদ্ধির পর সেটা বুঝলে তো হবে না। এ জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য ব্যবস্থাপনাই পুরো ফেল করেছে।’ বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির ভবিষ্যৎ নিয়ে সাবেক এই খাদ্য সচিব আরও বলেন, ‘গত বছরও বাজার নিয়ন্ত্রণে সাড়ে ১৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু টার্গেটের ধারেকাছেও যেতে পারেনি তারা। এ বিষয়ে গতবার তারা ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও তারা ওই পথেই হাঁটছে। এবারের অবস্থা আরও কঠিন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। ইতোমধ্যে গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে উৎপাদনকারী দেশগুলো। এর প্রভাব পড়েছে চালের ওপর। কোনো কারণে বেসরকারি পর্যায়ে কাক্সিক্ষত চাল না পাওয়া গেলে সরকারিভাবে চাল আনতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

এদিকে অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে চালের দামে নিম্নগতি এসেছে বলে দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত সোমবার কেবিনেট মিটিংয়ে এটা (ধান-চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান) নিয়ে আলাপ হয়। বুধবার থেকে অভিযান পুরোপুরি শুরু হয়। সারা দেশে একসঙ্গে সাঁড়াশি অভিযানের মতো আমাদের এটা চলছে। বুধ-বৃহস্পতিবারও অভিযান হয়েছে। শুক্র-শনিবার বন্ধের দিনেও আমাদের অভিযান চলেছে। আমরা অনেক জায়গায় অনেক চাল অবৈধ মজুদ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

এমন পরিস্থিতিতে গতকাল সচিবালয়ে খাদ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘বাজারে অতিরিক্ত দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা শিগগিরই চাল আমদানি করার বিষয়টি এই মিটিংয়ের রেজ্যুলেশন (বিশ্লেষণ) নিয়ে সামারি রেডি (সারসংক্ষেপ তৈরি) করব। এরপর এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। তিনি আবার এনবিআরের কাছে পাঠাবেন। আমরা চাল আমদানি শুল্কমুক্ত করার প্রস্তাব দেব। তারপর ওনারা (এনবিআর) যেভাবে করেন। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) হয়ে সরকারি আদেশ (জিও) জারি হবে। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সপ্তাহখানেক লাগতে পারে বা যেভাবে ফাইল গড়াবে, সেভাবে হবে। আমরা তো আমাদের দিক থেকে তাড়াতাড়ি করার চেষ্টা করব। তবে এটা (চাল আমদানি) সীমিত পরিসরে, সীমিত সময়ের জন্য হবে। আগামী মৌসুমে যাতে কৃষকের ক্ষতি না হয় সেটা বিবেচনা করেই এটা হবে।’

গত বছরও জুলাই-আগস্ট মাসে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়ে সাত দফায় মোট সাড়ে ১৬ লাখ টন সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। এসব চাল আনতে ৪ শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কমানো শুল্কহারে চাল আমদানিতে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো শেষ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৩ লাখ টন আমদানি করতে পেরেছিল। ওই সময় কয়েকজন চাল আমদানিকারকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, বেসরকারি পর্যায়ে তারা সাধারণত ভারত থেকে চাল আমদানি করে থাকেন। শুল্ক কমিয়ে সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে তাতে তাদের কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে সরকারি অনুমতি পেলেও ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি করতে অনীহা দেখাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর