মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ডাক্তারের কথায় রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়ে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডাক্তারের কথায় রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়ে : প্রধানমন্ত্রী

সেবার ব্রত নিয়ে চিকিৎসকদের মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ওষুধের থেকেও ডাক্তারের দুটো কথায় রোগীকে অনেক ক্ষেত্রে সুস্থ করে তোলে। তাদের ভিতরে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ‘বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস’ (বিসিপিএস) প্রতিষ্ঠানটির সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা শুধু একটা পেশা হিসেবে না, মানুষের সেবা করা, সেই সেবার ব্রত নিয়েই আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন, সেটাই আমরা আশা করি। ডাক্তারের কথাই রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। সেটা হলো বাস্তবতা। চিকিৎসকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আপনারা মানবতাবোধ নিয়ে মানুষের পাশে থাকবেন; এটাই হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেই আপনারা সব থেকে সুখ পাবেন বলে আমি মনে করি। 

শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, মানবতাবোধ নিয়ে এ দেশের মানুষকে কীভাবে আমার মতো করে সেবা করে যাব সেটাই আমার লক্ষ্য। সেটাই মানুষকে দিয়ে যাচ্ছি। ক্ষমতাটা আমার কাছে একটা সুযোগ বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার। এখানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোগবিলাসে গা ভাসিয়ে দেওয়া নয়, বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার এবং তাদের সেবার একটা সুযোগ আমি মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, টাকা-পয়সা হয়ে গেছে। একটু হাঁচি-কাশি হলেই তারা বিদেশে চলে যান। একদিকে ভালো, তাতে আমাদের এখানে রোগীর চাপ একটু কম পড়ে। কিন্তু কভিড-১৯ এর সময় তো কেউ বিদেশে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন আমরা নিজেদের টাকায় কিনেছি। টেস্ট কিট নিজের টাকায় কিনেছি। আমরা বিনা পয়সায় সবাইকে দিয়েছি। এসব বিত্তশালী, যারা হঠাৎ টাকা-পয়সা বানিয়ে বেশ ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন; তারা কিন্তু বিদেশে যেতে পারেননি। কারণ তখন তো সব দরজা বন্ধ। তিনি বলেন, তখন বাংলাদেশের হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা নিতে হয়েছে বা ভ্যাকসিন নিতে হয়েছে। করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এখানে অনেকেই এ মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশেও যে এত সুন্দর হাসপাতাল আছে এটা তো আমরা কখনো দেখিনি, জানতামই না। করোনা আমাদের একটা শিক্ষা দিয়েছে, বিত্তশালীদের অন্ততপক্ষে দেশেও যে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে পারেন- এমন ডাক্তার, নার্স আছে, তা শিখিয়ে দিয়েছে। আমাদের ডাক্তাররাও যে এত দক্ষতা রাখেন অন্তত এ শিক্ষাটা তারা পেয়েছেন।

ক্যান্সার-কিডনি রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রার্দুভাব বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অসংক্রামক রোগের প্রার্দুভাব বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইদানীং ক্যান্সার এবং কিডনি রোগটার যেন একটু বেশি প্রার্দুভাব হচ্ছে। এ সম্পর্কে মানুষ কীভাবে সচেতন থাকতে পারে সে বিষয়ে জানানো দরকার। পাশাপাশি এ চিকিৎসাটা যেন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছতে পারে, প্রত্যেকটা বিভাগেই এ বিষয়ে হাসপাতাল তৈরি করা এবং সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস এবং অন্যান্য, হার্টের চিকিৎসা এবং পরীক্ষা হয় সে পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। সে কার্যক্রম আমরা করে যাচ্ছি।

রোগ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও আমি বলব, মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং যথাযথভাবে ডায়াগনোসিস করা যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটার ওপর আপনারা একটু গুরুত্ব দেবেন। চিকিৎসকদের গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গবেষণায় মনোযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। অনলাইনে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রত্যেক উপজেলা হাসপাতালে ওয়েবক্যাম স্থাপন করেছে। আমরা এটিকে আরও উন্নত করব। যাতে অনলাইনে উপজেলা থেকে মানুষ বিশেষজ্ঞ সেবা নিতে পারে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি ফেলোদের হাতে পদক তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

 

 

সর্বশেষ খবর