বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ডলারের দর নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে খোলাবাজারে

আলী রিয়াজ

ডলারের দর নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে খোলাবাজারে

ডলারের দর এখন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে খোলাবাজারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দর অনুসরণ করা যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট কাটাতে খোলাবাজার থেকে ক্রয় করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পরিমাণ ডলার সরবরাহ করে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাই খোলাবাজারে প্রতিদিন বাড়ছে টাকার বিপরীতে ডলারের দর। গতকাল খোলাবাজারে কোথাও কোথাও ১০২ টাকা পর্যন্ত ডলারের বিনিময় মূল্য উঠেছে। আন্তব্যাংকের ক্ষেত্রে ডলার ৯৭ থেকে ৯৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয়ের চাপ মেটাতে যে পরিমাণ ডলার প্রয়োজন তা পাওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে ডলারে ঘাটতি প্রতিদিন বাড়ছে। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে।

জানা গেছে, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশে আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে। জুন পর্যন্ত যা প্রায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় মোট আমদানির আর্থিকমূল্য দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৬৭ কোটি ডলার। অন্যদিকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭১৮ কোটি ডলারে। এই পরিস্থিতি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি করেছে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৭৫৭ কোটি ডলার। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চলতি হিসাবে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। এ ছাড়া ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯১৯ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। দেশে ২০২১ সালের নভেম্বরের পর থেকে মাসিক আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ ৭০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমদানি ব্যয়ের এমন উল্লম্ফনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি রপ্তানি আয় এবং রেমিটেন্স প্রবাহ। তাই এ পরিস্থিতি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের (এফএক্স রিজার্ভ) ওপর চাপ  তৈরি করেছে। এ ছাড়া আমদানি বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং চলতি হিসাবে বিদ্যমান ঘাটতি রিজার্ভের পরিমাণ (জুন পর্যন্ত) ৪ হাজার ১৮২ কোটি ডলারে নামিয়ে এনেছে। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ- ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলার।  সাম্প্রতিক এই ঘাটতির মূল্য দিতে হচ্ছে এখন। প্রতিদিন ডলারের সংকট ব্যাংকগুলোতে হাহাকার তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফা টাকার অবমূল্যায়ন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার বিনিময় হার ডলারের বিপরীতে ৯৩ টাকা ৯৪ পয়সা নির্ধারণ করেছে। তবে বাজারে এই দর কোথাও দেখা যায়নি। আন্তব্যাংকের গতকাল ৯৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে বলে একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এর বাইরে কিছু ব্যাংক তাদের চাহিদা মতো ডলার না পেয়ে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনেছে। ফলে খোলাবাজারে ডলারের দর ১০২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেও যা ছিল ৯৮ থেকে ৯৯ টাকা। এসব ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমদানিকারকরা শতভাগ মার্জিন দিয়েও এলসি খুলতে পারছে না। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের বাইরে থেকে ডলার কিনে এলসি খুলতে অনুরোধ করছে। বড় কয়েকটি ব্যাংক তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যে চাহিদা মতো ডলার সরবরাহ করলেও ছোট ব্যাংকগুলো ডলার পাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিদিন বাজারে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছু সংকট আছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এখনো পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বাজারে ডলার সংকট থাকলেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। কিছুটা আতঙ্কের কারণে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি আমাদের আমদানি বেড়েছে। পাশাপাশি রপ্তানিও বেড়েছে, রেমিট্যান্স বেড়েছে। ফলে আগামীতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না।

সর্বশেষ খবর