বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

নির্দেশনা মানছে না সরকারি দফতরই

এসির ব্যবহার কমেনি স্যুট-টাই পরে অফিস করছেন অনেকেই

উবায়দুল্লাহ বাদল

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সব সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার ওপরের তাপমাত্রায় ব্যবহারের অনুরোধ ছিল বিদ্যুৎ বিভাগের। সে নির্দেশনা উল্লেখ করে ২০১৩ সালের ১৩ মে সব সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পুরুষ কর্মকর্তাদের প্যান্ট-শার্ট (অর্ধ/পুরো হাতা) পরিধান করে অফিস করার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। তবে আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা থাকলে স্যুট-টাই পরিধান করে অফিস করা যাবে। প্রতি বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে উল্লিখিত নির্দেশনা মেনে চলতে পরিপত্র জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিদ্যমান ওই পরিপত্রের নির্দেশনাগুলো অধিকাংশ সরকারি দফতরেই মানা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র খুব কম তাপমাত্রায় ব্যবহার করে বিদ্যুতের অপচয় করা হচ্ছে। এমনকি কর্মকর্তা কক্ষে না থাকলেও এসি ছেড়ে রাখা হচ্ছে। এর আগেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

প্রায় ১০ বছর আগের জারি করা পরিপত্র এখন অনেকটাই অকার্যকর। গতকাল সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সচিব থেকে শুরু বেশির ভাগ কর্মকর্তার কক্ষেই ২০ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসি চলছে। তবে কোনো কোনো কক্ষে ২৪-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এসি চলতে দেখা গেছে। অনেকের কক্ষে দেখা গেছে ফ্যান ও এসি একসঙ্গে চলছে। দেশব্যাপী প্রচণ্ড গরমেও কোনো কর্মকর্তাকে অর্ধহাতা শার্ট পরিহিত পাওয়া যায়নি। বেশির ভাগই পরিধান করেছেন ফুল (পুরো) হাতা শার্ট। আবার কোনো কোনো কর্মকর্তাকে স্যুট-টাই পরিধান করেও অফিস করতে দেখা গেছে। একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কোনো কোনো কক্ষে গেলে মনে হয় সাইবেরিয়ায় আছি। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা চলতে থাকে এ যন্ত্র। একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকায় প্রতিদিন যে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে তার ৭০ শতাংশই যাচ্ছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালাতে। ২ টনের একটি এসি চালাতে ঘণ্টায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে, সে বিদ্যুৎ দিয়ে ৩০-৩৫টি ফ্যান চালানো যায়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানান, দেশে কমবেশি সরকারি ১৩টি ভবনে সেন্ট্রাল এসি বসানো হয়েছে। এসব ভবনে একজন অফিস করলেও শত শত টনের এসি চলে। এর মধ্যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব ভবনে ২ হাজার ৫০০, পান্থপথের পানি ভবনে ২ হাজার ৪০০, সচিবালয়ের নতুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভবনে ১ হাজার ৫০০, পুলিশ সদর দফতরে (এনেক্স ভবন) ১ হাজার ২০০, বিজ্ঞান জাদুঘরে ১ হাজার, জাতীয় আর্কাইভ ভবনে ৬০০ টন এসি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যটন ভবন, বিডা ভবন, আইসিটি ভবন, নির্বাচন কমিশন ভবন, জাতীয় সংসদ, বিটিআরসি ভবন, সিপিটিইউ ভবনে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র রয়েছে। এসব ভবনের বেশির ভাগে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিলার এয়ারকুলার বা ওয়াটারকুলার রয়েছে। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সরকারের সকল পর্যায়ের সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে উদ্ধৃত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গরমে কেউ যেন কোট-স্যুট না পরেন। এ ছাড়া সরকারি অফিসগুলোর এসি একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় চালানোর জন্যও বলেছেন। অপচয় না করতে প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই বলে আসছেন।’ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানীসহ সারা দেশে আগামী এক সপ্তাহের জন্য দিনে ২৪ ঘণ্টায় ১ ঘণ্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর পরও যদি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না যায় সে ক্ষেত্রে লোডশেডিংয়ের সময় আরও ১ ঘণ্টা বাড়ানো হতে পারে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ রাখা হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় নামাজ ও প্রার্থনার সময় ছাড়া শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রাত ৮টার পর শপিং মলসহ দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রাত ৮টার পর কোনো শপিং মল খোলা পাওয়া গেলে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সপ্তাহে এক দিন দেশের পেট্রোল পাম্পগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময়সূচি কমানো এবং অফিসের বৈঠক ভার্চুয়ালি করার বিষয়েও চিন্তাভাবনা হচ্ছে। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, মাঠ প্রশাসন, অধিদফতর, দফতর ও পরিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস আসবাব, অফিস সরঞ্জাম, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ এবং সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন প্রাপ্যতার প্রাধিকার পুনর্নির্ধারণ করে দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই সময় নতুন প্রাধিকারের তালিকায় উপসচিব এবং যুগ্মসচিবদের কক্ষে একটি করে এসি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও অন্যান্য কর্মচারীর দাফতরিক কার্যালয়ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়।

 

সর্বশেষ খবর