শিরোনাম
সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

তলবের পর দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন রাষ্ট্রদূত কিয়াউ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

তলবের পর দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন রাষ্ট্রদূত কিয়াউ

সীমান্তে গোলায় হতাহতের পর গতকাল মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হলে তার সামনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়। মন্ত্রণালয়ের আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকে এড়াতে মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে যান রাষ্ট্রদূত। এটা এক মাসের মধ্যে চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রদূতকে তলব করার ঘটনা। জানা যায়, রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মো-কে গককাল সকালে মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। আরও তিন কর্মকর্তা নিয়ে বেলা ১১টার দিকে মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছান রাষ্ট্রদূত। বিশ্রাম কক্ষে প্রায় আধাঘণটা অপেক্ষার পর তাকে ডেকে নেওয়া হয়। পররাষ্ট্র সচিব ও মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক দেশের বাইরে থাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাজমুল হুদা রাষ্ট্রদূতের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। জানানো হয় কড়া প্রতিবাদ। চল্লিশ মিনিটের এই বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়ের কক্ষ থেকে বেরিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যান রাষ্ট্রদূত। একইভাবে গেট থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়েন। তাকে বহনকারী গাড়ি দ্রুত ত্যাগ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চত্বর।

পরে বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ লিপি দিয়েছি। সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর পুনারাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য তাদের ডেকে সতর্ক করেছি। মিয়ানমারে কী হচ্ছে, তা দেখা আমাদের দায়িত্ব নয়। তা দেখার দায়িত্ব তাদের। মিয়ানমারের গোলা আমাদের এখানে যেন না পড়ে, এটা বলা হয়েছে। খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিকামী রাষ্ট্র, অনেক দিন ধরেই আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছি। তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের তেমন কোনো জবাব নেই। উনি বলেছেন, এই তথ্যগুলো উনি নেপিদোকে জানাবেন। উনার একটি বক্তব্য আছে, এটা হয়তো আরাকান আর্মির গোলা হতে পারে। তবে আমাদের বক্তব্য ছিল, আপনাদের অভ্যন্তরে যা ঘটছে, সেটা আপনাদের দায়িত্ব। আমাদের এপারে যেন কিছু না হয়। সেটা আপনারা নিশ্চিত করবেন। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা আপনাদের সমস্যার সমাধান করুন, যাতে আমাদের এখানে কোনো রক্তারক্তি না হয়। খুরশেদ আলম বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে নিয়মমাফিক যা করা যায়, আমরা দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে সেটাই করছি। আমাদের কোনো দুর্বলতা নেই, শক্ত অবস্থান থেকেই তাদের সতর্ক করেছি। আমরা চেষ্টা করছি, আসিয়ান দেশগুলোর কূটনীতিকদেরও বিষয়টি অবহিত করতে। তাদের ব্রিফ করা হবে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সব এজেন্সির সঙ্গে সভাও করেছি। বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে সজাগ থাকতে নির্দেশনা দিয়েছি। কোনো রোহিঙ্গা যেন বাংলাদেশে না ঢোকে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছি।

গত শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টারের একাধিক গোলা রাখাইনের ওয়ালিডং পাহাড়ের পাদদেশের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে এসে পড়ে। এতে মো. ইকবাল নামের এক কিশোরের প্রাণ যায়। আহত হয় আশ্রয়শিবিরের পাঁচজন। একই দিন বেলা ৩টার দিকে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখার ৩৫ নম্বর পিলারের কাছাকাছি জায়গায় গরু আনতে গেলে স্থলমাইন বিস্ফোরণে অথোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামের বাংলাদেশি এক তরুণের পা উড়ে যায়। এ ছাড়া সীমান্তে লাগাতার গোলাগুলিতে কয়েকদিন ধরেই আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী। এই গোলাগুলির কারণে গত ২১ আগস্ট, ২৮ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রদূতকে তিন দফা ডাকা হয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

সর্বশেষ খবর