সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গুমের সঠিক তথ্য নিয়ে কথা বলা উচিত

বিবিসিকে প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

গুমের সঠিক তথ্য নিয়ে কথা বলা উচিত

বাংলাদেশে গুম নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা এই প্রশ্ন তুলে তাদের দেখা উচিত নিজেদের দেশে কত মানুষ গুম হচ্ছে। অভিযোগ না করে সঠিক তথ্য নিয়ে কথা বলা উচিত। বিবিসির রবিবারের বিখ্যাত শো ‘সানডে উইথ লরা কুইন্সবার্গ’ এক সাক্ষাৎকারে তিনি  এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতি, কমনওয়েলথ ইত্যাদির পাশাপাশি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে বলে জানান তিনি।  সাড়ে ৭ মিনিটের সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে তিনি প্রথম দেখেছিলেন ১৯৬১ সালে যখন রানি পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সফরে যান। তখন তিনি শিশু ছিলেন। বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে দেখেছিলেন রানিকে। তিনি আরও বলেন, রানি শুধু বিশ্বের নেতা ছিলেন তা নয়, তিনি ছিলেন সারা বিশ্বের দেশগুলোর জন্য একজন মমতাময়ী মা। শেখ হাসিনা বলেন, আমি সাত বার কমনওয়েলথ সামিটে অংশ নিয়েছি। এ ছাড়া ২০১২ সালে রানির দাওয়াতে অলিম্পিকে যোগ দিয়েছি। প্রত্যেকবারই দেখা হয়েছে। তাঁর অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল। একবার কমনওয়েলথ সম্মেলনে আমাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজ করেন হাসিনা কোথায়, ওঁকে দেখছি না কেন! শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ সম্পর্কে বলেন, বর্তমান সময়ে এসে একা একটি দেশ চলতে পারে না। জোটবদ্ধ হয়ে থাকার প্রয়োজন আছে। লরা কুইন্সবার্গ জিজ্ঞেস করেন, সদ্য প্রয়াত রানির কমিশনার বাংলাদেশ সরকারকে বলেছে আগামী নির্বাচন যেন সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, একই কথা জাতিসংঘও বলছে।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য আমি আমার বাবাসহ পরিবারের ১৮ সদস্য হারিয়েছি। এরপর ২১ বছর দেশে গণতন্ত্র ছিল না, প্রায় ২০ বার দেশে মিলিটারি ক্যু করা হয়েছে বা চেষ্টা করা হয়েছে। আর্মি থেকে রাজনৈতিক দল হয়েছে। তারা তো মানুষের কাছে কখনোই ভোটের জন্য যেত না। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আমার সংগ্রাম ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এটা নিশ্চিত করেছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, অভিযোগ যে কেউ করতে পারে, কিন্তু আমার দেশের বাস্তবতা ও সত্য দেখতে হবে। আমার দেশে এর আগে আর্মি ব্যবহার করে, প্রশাসন ব্যবহার করে নির্বাচন করা হয়েছে। আর্মি ক্ষমতায়ও ছিল দীর্ঘদিন। একই শোতে কথা বলেন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডান ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েল।

রানির মরদেহে শ্রদ্ধা : রবিবারে শেখ হাসিনা ওয়েস্টমিনিস্টার হলে রানির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানা, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশন প্রধান সাঈদা মুনা তাসনিম। দুপুরে রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে তিনি বাকিংহাম প্যালেসে ভোজে অংশ নেন।

রাজা তৃতীয় চার্লসের ফোন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন ব্রিটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস। শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বাকিংহাম প্যালেস থেকে টেলিফোন করেন তিনি। যুক্তরাজ্যে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি কথা বলেন। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে যোগদান করতে যাচ্ছেন, এ জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে রাজপরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান তিনি। টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে প্রয়াত রানি মায়ের মতো ছিলেন। তিনি (দ্বিতীয় এলিজাবেথ) কমনওয়েলথের একজন অসাধারণ প্রধান ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমি রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শেখ হাসিনা ব্রিটেনের রাজাকে বলেন, ‘প্রয়াত রানি এলিজাবেথের সম্মানে বাংলাদেশ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে এবং রানির বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।’

সর্বশেষ খবর