সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

হামলার পর লুটপাটেরও অভিযোগ

আহত কেন্দ্রীয় নেতারা হাসপাতালে, সারা দেশে বিক্ষোভ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

হামলার পর লুটপাটেরও অভিযোগ

রাজধানীতে গতকাল বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের হামলা-মামলা অব্যাহত রয়েছে। হামলায় আহতরা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নোয়াখালীতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন আটজন নেতা-কর্মী। গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকে। পুলিশের মামলায় রাজধানীর মিরপুরে বিএনপির নয়জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রদল নেতার বাড়িতে হামলা-লুটপাট করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সদস্যরা। গতকালও ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- 

নোয়াখালী : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু সস্ত্রীক ঢাকায় ফেরার পথে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে তার ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করেছে। গতকাল দুপুরে চৌমুহনী প্রধান সড়কে বেগমগঞ্জ উপজেলা ও চৌমুহনী পৌর বিএনপির যৌথ উদ্যোগে

বিক্ষোভ মিছিল বের করে।  মিছিলটি চৌমুহনী বড় পোল এলাকায় পৌঁছলে একদল পুলিশ বিনা কারণে মিছিলের পেছন থেকে এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের ধাওয়ায় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মফিজুর রহমান ওরফে দিপুসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আটজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ যুবদল ও ছাত্রদলের তিন কর্মীকে আটক করে। আটকরা হলেন- মো. সজীব (৩৮), মোর্শেদ আলম (৩৮) ও মো. শিমুল (২৬)।

বরকতউল্লা বুলুর শয্যাপাশে মির্জা ফখরুল : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুকে দেখতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ শেষ করে রাত ৮টায় হাসপাতালে যান তিনি। বিএনপি মহাসচিব আইসিইউর চিকিৎসকদের কাছে তার শারীরিক খোঁজখবর নেন। এদিকে শনিবার বনানীতে হামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং মহিলা দলের রুনা লায়লা, মেহেরুন নেসাসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে সেলিমা রহমান, তাবিথ আউয়ালকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রূপগঞ্জ : রূপগঞ্জে ছাত্রদলের মশাল মিছিলকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাসুদুর রহমানের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বাড়ির চারপাশ ঘিরে ফেলেন। এরপর প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে অনেকগুলো ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। ঘরে ঢুকে সবাইকে নির্মমভাবে মারধর করে। বিভিন্ন কক্ষে লুটপাট চালানোর এক পর্যায়ে তারা বই-খাতা ও আসবাবপত্রে আগুন লাগিয়ে দিয়ে চলে যান। পরে প্রতিবেশীরা এসে আগুন নেভান। হামলার সময় পুলিশ ছাত্রদল নেতার বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা বলেন, এসব ঘটনা তাকে কেউ জানায়নি। তিনি শুনেছেন, ছাত্রদলের মশাল মিছিল থেকে কয়েকটি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়েছে।

মাসুদুরের ছোট বোন রেহানা আক্তার (১৪) কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, ‘ওরা ঘরে ঢুইকা আমার গলায় ছুরি ধইরা বলে, ঘরতে বাইর হ, নইলে কানলে গলা ফালাই দিমু। পরে আমারে মারধর করতে করতে ছাদে নিয়া যায়। সেখানে আমার মায়েরে ফালাইয়া পিডাইছে। যাওয়ার আগে আমার বই-খাতা সব পুড়াইয়া দেয়।’

 

বাড়িতে গিয়ে মাসুদুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। হামলায় আহত মা-বাবাকে নিয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে আছেন তিনি। মাসুদুর রহমান বলেন, শনিবার রাজধানীতে তাবিথ আউয়ালসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রাত ৯টার দিকে ভুলতা এলাকায় মশাল মিছিল বের করেন তিনি। থানায় অভিযোগ করা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে এই ছাত্রদল নেতা বলেন, হামলার সময় বাড়ির বাইরে এক গাড়ি পুলিশ ছিল। তাদের উপস্থিতিতেই এসব ঘটনা ঘটেছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, হামলার সময় পুলিশের কিছুই করার ছিল না। সেখানে সর্বোচ্চ তিন থেকে চারজন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সারা দেশে বিক্ষোভ : সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলা এবং এসব ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের হতাহতের প্রতিবাদে সারা দেশে এ কর্মসূচি আহ্বান করে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে। এ ছাড়া সারা দেশে জেলা-উপজেলা ও মহানগরী পর্যায়ে এ প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানীর নয়াপল্টনের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করা হবে। তিনি বলেন, আজকে এই বাংলাদেশের মানুষ যখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে, তখন তারা সভা-সমাবেশে হামলা, আক্রমণ ও হতাহতের মাধ্যমে দেশে সংঘাত ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়, যাতে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সোজা ও সহজ হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তর ও দক্ষিণের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল ইসলাম মজনুর পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। রাজধানীর পল্লবী ও বনানীসহ দেশব্যাপী বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিবর্ষণ ও আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘হামলা করে কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আপনাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’ তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে বোমা মারছে। সরকার নীরব। তারা রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আসলে সরকারের কোমর সোজা নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সে জন্য আজ বুক ফুলিয়ে মিয়ানমারের বোমাবর্ষণের প্রতিবাদ করতে পারছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে, জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে থাকা সরকারকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, যত দিন এই দেশ শাসন করবে, এ দেশের মানুষের সব অর্জন তারা ধ্বংস করে দেবে। সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেন, এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন। সংসদ বিলুপ্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। সেই তত্ত্বাবধায়কের অধীনে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের নতুন সরকার নির্বাচিত করবে।

সর্বশেষ খবর