বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আধিপত্যে রক্তাক্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প

♦ সক্রিয় বিভিন্ন গ্রুপ ♦ হাতে হাতে অস্ত্র ♦ প্রতিদিনই সংঘর্ষ ♦ দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে উঠেছে সংঘাতময়। আধিপত্য বিস্তারের জেরে কক্সবাজারের ৩২টি ক্যাম্পে একে অপরের ওপর হামলা করছে বিদ্যমান সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সংগঠনগুলো। রোহিঙ্গারা ভ্রাতৃঘাতী হওয়ায় প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। কক্সবাজার ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক সৈয়দ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘কিছু গ্রুপ অনৈতিক সুবিধা পেতে ক্যাম্পে সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করছে। যারা এ ধরনের কাজ করছে তাদেরও তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের আইনের আওতায় আনার। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় সমতল ভূমির মতো অভিযান চালানো যায় না।’ তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এপিবিএনসহ অন্য সংস্থাগুলো কাজ করছে। বর্তমানে ক্যাম্পের পরিস্থিতি আগের চেয়ে স্বাভাবিক।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা বলে অনেক সংগঠন সক্রিয় রয়েছে ক্যাম্পে। তারা প্রত্যাবাসনের কথা বলে রোহিঙ্গাদের দলে টানলেও নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার জন্য দল ভারী করা। ক্যাম্পের অবস্থান ধরে রাখতে নিজেরাই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিটি ক্যাম্পেই একে অপরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে, যার খুব সামান্যই প্রকাশ্যে আসে। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আধিপত্য বিস্তারের জেরে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কমপক্ষে ১১৮টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গত চার মাসে ১৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর এসব খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা (মাঝি) ও স্বেচ্ছায় পাহারারত স্বেচ্ছাসেবক।

জানা যায়, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় ছোট-বড় সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে শতাধিক। এ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর একেকটিতে আবার সদস্য রয়েছে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ জন। গ্রুপগুলোর ছোট-বড় সন্ত্রাসীরা ব্লকভিত্তিক এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, অপহরণসহ ১২ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রায়ই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। সাধারণ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর পাশাপাশি সক্রিয় মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামী মাহাজ এবং জমিয়াতুল মুজাহিদিনের পাশাপাশি নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন। মাস্টার মহিবুল্লাহ খুনের পর আরসা ক্যাম্পে কোণঠাসা থাকলেও ফের তারা অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর জের ধরে ইসলামী মাহাজ ও জমিয়াতুল মুজাহিদিন প্রতিদিনই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। তারা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার ছাড়া মাদক, মানব পাচার, অস্ত্র ব্যবসা ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।

অস্ত্র হাতে ফেসবুক লাইভে চার খুনের বর্ণনা রোহিঙ্গা যুবকের

 

সর্বশেষ খবর