বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গ্রামে বেড়েই চলেছে সিজারিয়ান অপারেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালের তৎপরতা, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতিসহ নানা কারণে গ্রামে বেড়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে গ্রামে সিজারিয়ানের হার ছিল মাত্র ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। সিজারিয়ান অপারেশনে সন্তান জন্ম দিতে বেসরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় সিলেটে ও সবচেয়ে কম বরিশালে।

সিলেটে সর্বোচ্চ বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয় হয় ৩০ হাজার ৫৫৭ টাকা ও রাজশাহীতে কম ব্যয় হয় ১৫ হাজার ৭০৫ টাকা। সরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় সিলেটে ১৭ হাজার ৮৩৭ টাকা। সবচেয়ে কম হয় রংপুরে ৭ হাজার ৩১ টাকা। এনজিওতে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় ২১ হাজার ৪৭৬ টাকা সিলেটে ও কম হয় রংপুরে ১২ হাজার ৮১ টাকা।

মেসিভ বোম অব সি-সেকশন ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ : এ হাউসহোল্ড লেভেল অ্যানালাইসিস ২০০৪-২০১৮ শীর্ষক এক জরিপের ফলাফল তুলে ধরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে এক অনুষ্ঠানে এ ফলাফল তুলে ধরা হয়। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে জরিপের ফল তুলে ধরেন পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের ড. আবদুর রাজ্জাক সরকার। সিজারিয়ান অপারেশনের গড় খরচ ২০ হাজার ৬১ টাকা। যেখানে ঘরে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ব্যয় মাত্র ১ হাজার ৩৭৮ টাকা থেকে ৫ হাজার ৬৩২ টাকা। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অপারেশন করা নারীদের ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে। ২৭ হাজার ৩২৮ নারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়। তাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। জরিপ থেকে জানা যায়, দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ব্যয় ঢাকায় ১৩ হাজার ৩৮৩ টাকা, চট্টগ্রামে ১৫ হাজার ৮৩১, বরিশালে ১৬ হাজার ৮৪৬, খুলনায় ১১ হাজার ৮৯৩, রাজশাহীতে ১০ হাজার ৯৪১, সিলেটে ১৭ হাজার ৮৩৭, রংপুরে ৭ হাজার ৩১, ময়মনসিংহে ১১ হাজার ৫১৬ টাকা। বেসরকারি হাসপাতালে ঢাকায় ব্যয় হয় ২৩ হাজার ১৬৮ টাকা, চট্টগ্রামে ২৫ হাজার ৫০৭, বরিশালে ২৮ হাজার ৯৫৯, খুলনায় ১৫ হাজার ৭২৯, রাজশাহীতে ১৫ হাজার ৭০৫, সিলেটে ৩০ হাজার ৫৫৭, রংপুরে ১৮ হাজার ২৩০ এবং ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৯৭৩ টাকা। এনজিওর হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকায় ব্যয় হয় ২০ হাজার ৪৯৮, চট্টগ্রামে ১৫ হাজার ২৬৯, বরিশালে ১৫ হাজার ৮২৩, খুলনায় ১৪ হাজার ৭১০, রাজশাহীতে ১০ হাজার ৩৪৬, সিলেটে ২১ হাজার ৪৭৬, রংপুরে ১২ হাজার ৮১ এবং ময়মনসিংহে ১৫ হাজার ৬১ টাকা। এ অপারেশন ২০০৪ সালে ছিল ৩ দশমিক ৯৯ ভাগ, আর ২০১৭-২০১৮ সালে ৩৩ দশমিক ২২ ভাগ। এসব বিষয়ে এক নারী বলেন, বর্তমানে অনেক চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসব করতে চায় না। আমার ক্ষেত্রেই তা হয়েছে। শিরিন হক নামের আরেক নারী বলেন, গ্রামে ধাত্রী প্রথা ছিল। সেটা হারিয়ে গেছে। পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের ড. আবদুর রাজ্জাক সরকার বলেন, সরকারি চিকিৎসকরা বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছেন, অপারেশন করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনা হচ্ছে অপারেশন ১৫ শতাংশ হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে ২০১৭-১৮ সালে সেটি ছিল ৩৩ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে ২২ শতাংশ, পাকিস্তানে ২২ শতাংশ, নেপালে ১৬ ও মিয়ানমারে তা ১৭ শতাংশ। বছরভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৩-০৪ সালে ৫৪১৩ জনের মধ্যে ২১৬ জন অর্থাৎ ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০০৭ সালে ৪৯০৩ জনের মধ্যে ৪২২ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০১১ সালে ৭৩৪১ জনের মধ্যে ১১০৮ জন অর্থাৎ ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে ৪৬২৬ জনের মধ্যে ১১২২ জন অর্থাৎ ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর ২০১৭-১৮ সালে ৫০৪৫ জনের মধ্যে ১৬৭৬ জন অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ। আবদুর রাজ্জাক বলেন, গ্রামে এ সংখ্যা বাড়ছে। তার মূল কারণ হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো গ্রামের দিকে বেশি হচ্ছে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, গ্রামে সিজারিয়ানের সংখ্যা বাড়ছে। কেন বাড়ছে, এটা নিয়ে ভাবতে হবে। সামাজিক প্রচারণা ও পলিসি লেভেল নিয়েও ভাবতে হবে। বাংলাদেশে প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান প্রসব বেশি হয়।

 

 

সর্বশেষ খবর