মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

লড়াই হলো নিজেরা নিজেরাই

জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা ভোটে ২৫সহ আওয়ামী লীগ জয়ী ৪৯ বিদ্রোহী ৮, স্বতন্ত্র-জাপা ২, অনেক জায়গায় হাড্ডাহাড্ডি, বরিশালে মেয়র-ইউএনও তর্ক, নাটোরে এমপির আচরণবিধি লঙ্ঘন

নিজস্ব প্রতিবেদক

লড়াই হলো নিজেরা নিজেরাই

বাগেরহাটে গতকাল ভোটারদের লাইন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়জয়কার। তবে আট জেলায় জিতেছেন বিদ্রোহীরা এবং অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা  হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। বিএনপি ভোটে না থাকায় লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যেই।

চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে ৪৯ জেলায়। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৫ ও ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ২৪ জন। তবে    বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল এ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নিলেও ১০ জেলায় স্বতন্ত্রদের কাছে পরাজিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা আট জেলায় বিদ্রোহীদের কাছে, এক জেলায় জাতীয় পার্টি ও এক জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরেছেন। এ ছাড়া সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বেশি বিজয়ী হয়েছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে বেশ কিছু এলাকায় আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ভোট দিতে গিয়ে জিলা স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বরত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। অন্যদিকে নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য গাড়িবহর নিয়ে বেলা সোয়া ১১টার দিকে দীঘাপতিয়া এম কে অনার্স কলেজের প্রধান ফটকে আসেন। প্রশাসনের অনুরোধে চলে গেলেও প্রায় তিন ঘণ্টা পর আবারও তিনি গাড়িবহর নিয়ে কেন্দ্রের প্রধান ফটকে আসেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগের রাতে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলায় এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। পরে হাই কোর্টের আদেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালীর নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এ ছাড়া ভোলা ও ফেনীর সব পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ কারণে গতকাল ৫৭ জেলায় ভোট হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দেশের ৪৬২ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্দলীয় এ নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা না করলেও শুধু চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দিয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কয়েক জেলায় জাপার সমর্থকরা প্রার্থী হলেও অনেক জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নিজ দলেরই বিদ্রোহীরা। এ নির্বাচনে ৬০ হাজার ৮৬৬ ভোটার (নির্বাচকমণ্ডলী) ছিলেন। তাঁরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য মিলিয়ে ৬৭১ জন প্রতিনিধি বাছাইয়ে ভোট দেন। তবে আগেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২৫ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ৬৫ জন সাধারণ সদস্য ও ১৮ জন সংরক্ষিত সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : নারায়ণগঞ্জে ভোট গ্রহণের শুরুতে কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের ফলে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের খাজা শামসুল আলম নির্বাচিত হয়েছেন। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৬২৫ ভোট। আওয়ামী লীগের মো. ফারুক হোসেন পেয়েছেন ৫৪০ ভোট।

সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের আলহাজ মো. নজরুল ইসলাম ১৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। পটুয়াখালীতে (বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র মো. হাফিজুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য। এবারে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। তিনি ৫৮৩ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান মোহন পেয়েছেন ৪৭১ ভোট। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল ও মানিকগঞ্জে আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন নির্বাচিত হয়েছেন।

রংপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু ৬০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ ৪৮৪ ভোট পেয়েছেন। রাজবাড়ীতে আওয়ামী লীগের শফিকুল মোর্শেদ আরুজ জয়লাভ করেছেন। পঞ্চগড়ে আবদুল হান্নান শেখ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি চশমা মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তিনি ২৮৪ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবু তোয়বুর রহমান পেয়েছেন ২৩১ ভোট।

নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক নির্বাচিত হয়েছেন। মেহেরপুরে আওয়ামী লীগের আবদুুস সালাম নির্বাচিত হন। মাগুরায় আওয়ামী লীগের পঙ্কজ কুণ্ডু নির্বাচিত হয়েছেন। খুলনায় পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের শেখ হারুনুর রশীদ। বগুড়ায় পুনরায় চেয়ারম্যান হলেন ডা. মকবুল হোসেন। সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট। মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৬১২ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল করিব রুমেন ঘোড়া প্রতীকে ৬০৪ ভোট পেয়েছেন।

ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ড. হারুন অর রশীদ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৪৭৮ ভোট। তাঁর নিকটতম আওয়ামী লীগের কনককান্তি দাস পেয়েছেন ৪৬৩ ভোট।

দিনাজপুরে জাতীয় পার্টির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ১১৬২ (আনারস) ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরী ৭৮ (চশমা) ও জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক তৈয়বউদ্দিন চৌধুরী ২২৬ (মোটরসাইকেল) ভোট পেয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট না দিতে জেলা বিএনপি থেকে বলা হলেও সে নির্দেশনা পালন করা হয়নি। নির্বাচনে ভোট প্রদান করেছেন বিএনপি সমর্থিত জনপ্রতিনিধিরা।

নাটোরে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তাঁর চশমা প্রতীকে পেয়েছেন ৫৪৮ ভোট। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির ড. নুরুননবী মৃধা ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৪৭ ভোট।

কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯৬১ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান (চশমা প্রতীক)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. আশরাফ উদ্দিন রেণু (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন ২৫৮ ভোট।

চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মনজু জয়লাভ করেছেন। ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান (আনারস) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাইফুজ্জামান পিকুল ৯৫৭ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী ঘোড়া প্রতীকে ৯৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। গাইবান্ধায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের আবু বকর সিদ্দিক (তাল গাছ) ৫৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গতবারের চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতাউর রহমান সরকার (ঘোড়া), তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৫২৩। নেত্রকোনায় বিপুল ভোটে বিজয়ী আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট অসিত সরকার সজল। নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন ভূইয়াকে হারিয়ে স্বতন্ত্র মনির হোসেন ভূইয়া আনারস মার্ক প্রতীকে ৬২২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। আবদুল মতিন ভূইয়া পেয়েছেন ৩৫০ ভোট।

কক্সবাজারে চেয়ারম্যান হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি শাহীনুল হক মার্শাল (আনারস)। তিনি ৫৭৮ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৩৯৫ ভোট।

শেরপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হুমায়ুন কবির রুমান (মোটরসাইকেল) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫৪৯ ভোট আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল (আনারস) পেয়েছেন ১৮৭ ভোট; অন্য প্রার্থী জাকারিয়া বিশু (চশমা) পেয়েছেন ৭ ভোট।

চট্টগ্রামে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। নির্বাচন চলাকালে ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করে ছবি তোলার চেষ্টাকালে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

গাজীপুরে চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগের মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা (মোটরসাইকেল)। নড়াইলে চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস। চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের ওচমান গণি পাটওয়ারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের মো. সদর উদ্দিন খান বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় লালমনিরহাট জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের (আদিতমারী উপজেলা) সদস্য প্রার্থী সেলিম হায়দারকে (৫০) অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

পিরোজপুরে সংঘর্ষে আহত প্রার্থীসহ : পিরোজপুরের সাত উপজেলায় সকাল ৯টায় একযোগে শুরু হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট দুপুর ২টায় শেষ হয়। এ জেলায় চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সালমা রহমান বিজয়ী হওয়ায় শুধু সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে স্বরূপকাঠি উপজেলায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। রাত ৩টার দিকে করফা বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষে একজন সদস্য প্রার্থীসহ পাঁচজন আহত হন।

বিনা ভোটে ২৫ চেয়ারম্যান : নির্বাচনের আগে ২৫ জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেগুলো হলো- জামালপুর, ঢাকা, পাবনা, পিরোজপুর, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট।

ভোটকক্ষে প্রবেশ নিয়ে মেয়র-ইউএনও বাদানুবাদের ভিডিও ভাইরাল : বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে জিলা স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বরত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। গতকাল সকাল ৯টা ৫ মিনিটের দিকে জিলা স্কুল কেন্দ্রের ১ নম্বর কক্ষের সামনে এ বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। সিটি মেয়রের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এ বাদানুবাদ প্রচার হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। দুপুর পৌনে ২টা নাগাদ ১ লাখ ৬১ হাজার ভিউ হয় ওই লাইভে।

লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, এক নম্বর ভোট কক্ষের সামনে যাওয়া মাত্র সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম মেয়রের কানের কাছে এগিয়ে তার নিজের পরিচয় দিয়ে কিছু একটা বলার আগেই মেয়র বলেন, এখানে যারা আছে সবাই ভোটার। এ পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তা মেয়রকে সিঙ্গেল সিঙ্গেল (একে একে) কক্ষের মধ্যে ঢুকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় মেয়র বলেন, এখানে যারা আছে সবাই ভোটার। মেয়র ভোট কক্ষে প্রবেশের আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান প্লিজ বলে কিছু একটা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় মেয়র ইউএনওকে লক্ষ্য করে বলেন, আমি তো জানি। এখানে সবাই ভোটার। কেন প্লিজ প্লিজ করতেছেন! বিরক্ত হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়র বলেন, আমি কি ঢুকছি ভিতরে, আমি কি ঢুকছি? কেন সিনক্রিয়েট করেন আপনারা এখানে? এরপর মেয়র আরও বলেন, আপনি কে এখানে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজের পরিচয় দেওয়ার পর মেয়র বলেন, আমি কি ভিতরে ঢুকছি নাকি। আপনারা তারপরও কথা বলতেছেন। কী বলবেন আপনারা। আমি কি বাচ্চা শিশু নাকি। স্টুপিডের মতো কথা বলেন। 

নাটোরে সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : নাটোরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনে নাটোর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ প্রায় সব পদেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল ভোট গ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা ১১টার দিকে শহরের দিঘাপতিয়া এম কে কলেজের প্রধান ফটকে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল গাড়িবহর নিয়ে যান। তিনি ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সেখানে লোকজনের জটলা শুরু হলে প্রশাসনের অনুরোধে কেন্দ্রের অদূরে একটি ঘরে অবস্থান নেন। পরে তিনি গাড়িবহর নিয়ে আবারও কেন্দ্রের প্রধান ফটকে আসেন ও অবস্থান করেন। তাঁকে দেখে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকে। এই কেন্দ্রে সকাল থেকেই সাংবাদিক পরিচয়পত্র নিয়ে অবস্থান করছিলেন সংসদ সদস্য শিমুলের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আকরাম হোসেন।

সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। তাঁর পিএসএর কর্মকাণ্ডেও কোনো অন্যায় হয়নি।

সকাল ১০টার দিকে একই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান। তার সঙ্গেও নেতা-কর্মীদের বহর দেখা যায়। তিনি ভোট কেন্দ্রের প্রধান ফটকে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে ভোটারদের প্রভাবিত করছিলেন এবং ঠেলে ঠেলে ভোট কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, আমি আমাদের দলীয় ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করেছি। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু দেখছি না।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিংড়া গোল-ই-আফরোজ সরকারি কলেজে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস শতাধিক ভোটার নিয়ে ভোট কেন্দ্রে ঢোকেন। দুপুর ১২টায় নজমুল হক সরকারি কলেজ কেন্দ্রে, নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্পাদক মনিরুজ্জামানকে তাঁর সমর্থক কাউন্সিলরদের নিয়ে ভোট দিতে দেখা যায়। কেন্দ্রের সামনে তিনি দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালান।

ভোটকক্ষে এবার দ্বিতীয় ব্যক্তি নজরে আসেনি : সিইসি

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর