বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি

আতাউর রহমান ঢালি

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তিনি বলেন, ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন আগামীতে করতে পারবে না। বিএনপির সমাবেশে রাজপথে মানুষ যেভাবে নেমেছে তাতে বিএনপি ছাড়া নির্বাচন করা অসম্ভব। জনগণ আজ জেগেছে। রাস্তার জনগণকে কখনই ঠেকানো যায় না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। এ সময় বিএনপি রাজনীতিসহ দেশের সামগ্রিক প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

আতাউর রহমান ঢালি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আজ একটি জটিল অবস্থার সম্মুখীন। যখনই নির্বাচন আসে তখন নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিন দিন দুর্বল হচ্ছে।  দেশের মানুষের স্বাধীনতার চেতনায় আঘাত হানছে। সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। সংবিধানে আছে- ‘জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। সকল ক্ষমতার উৎস হলে জনগণ তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করার ক্ষমতা যদি না রাখে তাহলে ক্ষমতা কার?’ দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পর এ অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার লোভে আদালতের ঘাড়ে চাপিয়ে এই ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছে। আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট অনুষ্ঠিত হলে তারা কয়টা আসন পাবে। তিনি বলেন, সময় এসেছে নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যবস্থাগুলো শক্তিশালী করার। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের পাশাপাশি নির্বাচনের আগে সংসদ থেকে সব সদস্যের পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জনবল দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। ডিসি-এসপিদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করানো যাবে না। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে আলাদা করতে হবে। সংবিধান এক ব্যক্তির শাসন গড়ে তুলেছে। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কোনো জবাবদিহিতা   নেই। জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যা অনুযায়ী দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট হওয়া উচিত। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী চাইলেই একজন মন্ত্রী নির্বাচন করবেন বা বাদ দেবেন এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে। আমলাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আমলাতন্ত্র দেশকে খেয়ে ফেলছে। আমলাতন্ত্রের কারণে প্রজেক্ট সঠিকভাবে শেষ হচ্ছে না।  আমলাদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে দেশ সঠিক গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা হতে পারে না। তিনি বলেন, সংসদে সরকারি দলের লোকেরা নিজ দলের ভুলের সমালোচনা করতে পারবে না এটা হতে পারে না। সংবিধানে আরও নতুন নতুন ধারা সংযোজন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকার কারণে দলগুলো এক ব্যক্তির দলে পরিণত হয়েছে। দলের নেতৃত্ব নিচ থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত করতে হবে। নির্বাচনের সময় নিম্ন পর্যায় থেকে প্রস্তাব আসতে হবে। তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করে মনোনয়ন দিতে হবে। তা না হলে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করা যাবে না। উপযুক্তরা রাজনীতিতে জায়গা পাবে না। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া এক সরকারের পরিবর্তে অন্য সরকার আসবে তাতে দেশের মানুষের কোনো পরিবর্তন হবে না। আতাউর রহমান ঢালি বলেন, মুজিব নগর সরকারের মাধ্যমে একটি সংবিধান পেয়েছিলাম। ৫০ বছর পর আমরা বলতে পারি দেশে সাম্য আছে? প্রতিবছর বহু মানুষ লুটপাট করে কোটিপতি হচ্ছে। দেশে ন্যায়ের শাসন নেই। গুম হচ্ছে। বিচার হচ্ছে না। বিচারহীনতা চলতে পারে না। মানুষ হিসেবে যে মানবিক মর্যাদা তাও ধুলোয় লুণ্ঠিত। এগুলো আমাদের স্বাধীনতার চেতনা ছিল না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য যে কোনো ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর বিএনপি রাস্তায় নেমেছে। জনগণের দাবি নিয়ে বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি রাখা হয়েছে। এটা হতে পারে না। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।  আদালতকে ব্যবহার করে মিথ্যা শাস্তি দিয়ে বিরোধী দলকে দমানো গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা হতে পারে না। বিএনপির লাখ লাখ নেতা-কর্মী মামলায় হয়রানির শিকার। বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হচ্ছে।

কারণ মানুষ দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। এসব সমাবেশ বানচালের জন্য সরকার হরতাল ডাকছে। তারপর ডাকবে জরুরি অবস্থা। জরুরি অবস্থা ডাকতে বাধ্য- কারণ তাদের জনসমর্থন নেই। তিনি বলেন, সরকারি দলের লোকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে এখন বৈশ্বিক সংকটের কথা বলে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে চলমান সংকট সৃষ্টি হতোই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সামনে দুর্ভিক্ষ হবে। তাহলে এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উচিত সব রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সংকট মোকাবিলা। কারণ দেশ সবার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

আতাউর রহমান ঢালি বলেন, আইএমএফ বলছে আমাদের রিজার্ভের তথ্য ভুল। জিডিপির তথ্য ভুল দেওয়া হয়েছে। ভুল তথ্য দিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ফানুসের মতো ফুলিয়ে রাখা হয়েছে। মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চনা গণতন্ত্র হতে পারে না। সরকার স্বাধীনতার চেতনাকে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। অবশ্যই স্বাধীনতার চেতনায় ফিরতে হবে। আওয়ামী লীগের চেতনা নয়, জনগণের চেতনায় ফিরতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে। যারা লুটপাট করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার না করলে পাচার থামানো যাবে না। তারা বিচার করবে না, কারণ তারা জানে এতে সরকার ও সরকারি দলের রাঘববোয়ালরা জড়িত। ভারত প্রসঙ্গে বলেন, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আমাদের কতগুলো সমস্যা আছে এগুলো সমাধান করতে হবে।

তিনি বলেন, দুদককে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অবসরে যাওয়া আমলাদের তিন বছর সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার পরই তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। নইলে চাকরিকালীন কোনো দলের তাঁবেদারি করে নির্বাচনী টিকিট পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র ক্ষত। আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র  পেরেকবিদ্ধ। আওয়ামী লীগকে নতুন করে ভাবতে হবে দেশকে বাঁচাতে হলে সবাইকে দরকার। আগে দরকার দেশকে বাঁচানো।

সর্বশেষ খবর