শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সেই বজলু গ্রেফতার, অক্ষত অস্ত্রের ভান্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেই বজলু গ্রেফতার, অক্ষত অস্ত্রের ভান্ডার

নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তির মাদকের গডফাদার বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বারকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল বিকালে রূপগঞ্জের পূর্বগাঁওয়ের সিটি চর এলাকা থেকে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব বলছে, তিনি ওই চর এলাকায় পালিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে, চনপাড়ার বাসিন্দারা বলছেন, বজলুকে নিয়ে গণমাধ্যমে একের পর এক খবর হয়েছে। তবে এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি চনপাড়ার মাদকের স্পট। বজলু গ্রেফতার হলেও অক্ষত রয়ে গেছে তার অস্ত্রের ভান্ডার। গ্রেফতার হয়নি তার দুই অস্ত্রধারী বডিগার্ড। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, কিছুদিন পরই বজলু জামিন নিয়ে বীরদর্পে এলাকায় ফিরে আসবেন।

বজলু কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের (চনপাড়া) সদস্য। তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের মারধর, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, অস্ত্র ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা রয়েছে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় ২৩টি মামলা রয়েছে। 

র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, বজলু মেম্বার শীতলক্ষ্যা নদীর ভিতরের সিটি চরে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে জাবেদ নামে এক যুবক ছিলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

চনপাড়ার অন্তত ২০ জন লোক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েক দিন পরই আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে চনপাড়ায় ফিরবেন বজলু। বজলুর অপকর্ম নিয়ে যারা মুখ খুলেছেন, তাদের কাউকেই তিনি ছাড়বেন না। এরই মধ্যে তাদের খুন করার হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া চনপাড়ায় মাদকের ব্যবসা নির্বিঘ্ন রাখতে সব মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ইতোমধ্যে মোট ২ কোটি টাকা উঠিয়েছেন। এরই মধ্যে সেই অর্থ উপর মহলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

বজলু মেম্বার এবং চনপাড়া বস্তিতে থাকা তার অনুসারীরা বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যার পর আলোচনায় আসেন। তার অনুসারী রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন, ভাতিজি জামাই ফাহাদ আহম্মেদ শাওন, রাজু আহম্মেদ রাজা, রায়হানসহ অর্ধশত যুবককে দিয়ে চনপাড়া বস্তির মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন বজলু। এ ছাড়াও মনু বেগম ও ময়না বেগম নামে আরও দুজন নারী মাদক ব্যবসায়ী বজলুর কথায় তাদের নিজেদের বাসায় মাদক বিক্রি করেন। এদের মধ্যে ময়না বেগম বলেন, ‘বজলু আমাকে জোর করে ইয়াবা ব্যবসা করিয়েছেন। আমি এখন করি না। ইয়াবা বিক্রি না করলে আমাকে বস্তি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আমাকে এবং আমার স্বামীকে একাধিকবার বজলু ও শাহিন মারধর করেছেন।’ গত ৯ নভেম্বর সিটি শাহীন র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। এরপর রায়হান, শাওনসহ কয়েকজনকে হেফাজতে নেয় র‌্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বজলুকেও গ্রেফতার করা হলো গতকাল।

গত ৮ সেপ্টেম্বর চনপাড়া বস্তিতে র‌্যাব-১ অভিযানে গেলে বজলু মেম্বারের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যদের ওপর হামলা হয়। হামলায় দুজন র‌্যাব সদস্য আহত হন।

বজলু মেম্বারের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে তার মেঝো মেয়ে রুমা আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা সিটি চরে ছিলেন। সেখান থেকে কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে গেছে, আমরা কিছুই জানি না। আমাদের কোনো কিছু জানায়নি কেউ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা তিনবার বিপুল ভোটে ইউপি মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার সঙ্গে সিটি শাহীনের কোনো সম্পর্ক ছিল না।’ চনপাড়া বস্তির বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বজলু মেম্বার বস্তিতে বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট, মাদক ব্যবসা করেন। তার অনুসারীদের অত্যাচারে কেউ এখানে সুখে থাকতে পারে না।’

সর্বশেষ খবর