শিরোনাম
রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সিলেটে ফখরুল

হুমকি ধমকিতে কাজ হবে না

শফিউল আলম দোলন ও শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট থেকে

হুমকি ধমকিতে কাজ হবে না

সিলেটে গতকাল বিএনপির সমাবেশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবার মানুষ জেগে উঠেছে, তারা তাদের ভোটের অধিকার আদায়ের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে চায়। সরকার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। হুমকি দিয়ে বলছে, বিএনপি আন্দোলন করলে খেলাফত মজলিসের অবস্থা হবে, হেফাজতের অবস্থা হবে। কিন্তু সরকারের এসব হুমকি-ধমকিতে কোনো লাভ হবে না। মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। তাদের দাবি পূরণ না করে ঘরে ফিরবে না। আমাদের লক্ষ্য একটাই, আমরা আমাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই।

গতকাল বিকালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগরের সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় গণসমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বক্তব্য রাখেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, ফজলুর রহমান, তাহসিনা রুশদী লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবনসহ বিএনপি নেতা কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জি কে গউছ, আবদুর রাজ্জাক, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, নুরুল ইসলাম সাজু প্রমুখ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার লম্বা লম্বা কথা বলে। তারা বলছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু এই সংবিধান কোন সংবিধান? যে সংবিধান বর্তমান সরকার ১০ বার কাটাছেঁড়া করেছে। যে সংবিধান এ সরকার নিজে তৈরি করেছে- এটা কি সেই সংবিধান? সরকার বিচার বিভাগকে পকেটস্থ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। দেশের মানুষ সেই সংবিধান মানে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। যারা এর বিরোধিতা করবে তাদেরকে গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।

বর্তমান সরকার নির্বাচিত কি না সেই প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালে কি মানুষ ভোট দিতে পেরেছিল? ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতেই তো ভোট শেষ হয়ে গিয়েছিল। অথচ তারা মিথ্যুকের মতো বলে তারা ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে। এ সরকারের বিচার জনতার আদালতে হবে। এদের কাউকেই ছাড়া হবে না। ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, কথা বলার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিল। এই অধিকারগুলো চুরি, ডাকাতি ও হরণ করার অপরাধে এ সরকারের বিচার জনতার আদালতে হবে। এদের ক্ষমা করা হবে না। সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে ২০১১ সালে খালেদা জিয়ার সমাবেশের মঞ্চে ইলিয়াস আলী বসা ছিলেন। সেই স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ ইলিয়াস আলী নেই। সে বেঁচে আছে কি-না কেউ জানে না। তার ছোট্ট মেয়ে বড় হয়েছে। এখনো সে বাবার ফেরার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু বাবা ফিরে আসে না। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী এখনো স্বামীকে ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রনেতা দিনার, জুনেদ ও ইলিয়াসের গাড়ি চালক আনসার আলীর কোনো খোঁজ নেই। লাকসামের সাবেক এমপি হিরু, ঢাকার সুমন-ইমনদের খবর নেই। তাদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানরা জানেন না তারা কোথায় আছে। এভাবে সারা দেশে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে তারা গুম, খুন ও গুলি করেছে। তারা নতুন করে পুরনো খেলায় মেতে ওঠেছে। এই খেলা হচ্ছে মামলা মামলা খেলা। গায়েবি মামলা। কোথাও কোনো কিছু ঘটেনি। কিন্তু মামলার আসামি হচ্ছেন বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী। ১৪ বছর ধরে সরকার এভাবে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছে সেটি এগিয়ে নিতে হবে। আর যদি কোনো মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়, হত্যা করা হয়, তবে মানুষ রুখে দাঁড়াবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পুলিশ দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। তারা মনে করেছে আগের মতো হত্যা করলে সবকিছু থেমে থাকবে। কিন্তু কিছুই থেমে যায়নি, সবাই আরও উজ্জীবিত হয়েছে। যে কারণে বিএনপির গণসমাবেশগুলো সফল হচ্ছে। বিএনপি ও দেশের মানুষের একটাই দাবি শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দাবির ফয়সালা হবে রাজপথে। বর্তমান সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে মন্তব্য করে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা মধ্যবর্তী সময়ের জন্য, নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। জারিজুরি খাটবে না, পুলিশ দিয়ে, আমলা দিয়ে, গোয়েন্দা দিয়ে সবকিছু রাতের অন্ধকারে পাল্টে দেবে- ইভিএম করবে, সেটা হবে না। জনগণ তার ভোট এবার দেখে নেবে। কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেবে। সেই ভোট হতে হবে, এর মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। এদিকে গণসমাবেশে অংশ নিতে দুই দিন আগে থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সিলেট আসতে শুরু করেন। গতকাল সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন নেতার নেতৃত্বে সমাবেশস্থলে মিছিল আসতে শুরু করে। সমাবেশ শুরুর আগেই পুরো আলিয়া মাদরাসা মাঠ নেতা-কর্মীতে পূর্ণ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অনুসারীরা রংবেরঙের টিশার্ট ও ক্যাপ পরে আসেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সিলেট পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। এ সময় সমাবেশস্থলের আশপাশের রাস্তাগুলোতে যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। প্রখর রোদের মধ্যে নেতা-কর্মীরা মাঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শোনেন। সমাবেশস্থলে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির কারণে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বিপর্যয় ঘটে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে দেখা গেছে। সমাবেশস্থলের আশপাশেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর