স্টেডিয়ামটির নাম আল জানুব। আরবি এ নামের অর্থ দক্ষিণ। স্টেডিয়ামের এ নাম রাখার বিশেষ কারণ আছে। আরব উপসাগরের তীরবর্তী ছাড়া কাতারের অন্য এলাকায় গেলে চোখে পড়বে রুক্ষ মরুভূমি। মাঝেমধ্যে মরূদ্যান। জনবসতিপূর্ণ এলাকা ছাড়িয়ে দক্ষিণের মরুভূমিতে যেতে হলে আল ওয়াকরাহ শহর পাড়ি দিতে হয়। এ শহরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে আল জানুব স্টেডিয়াম। দক্ষিণ মরুভূমির দরোজার মতোই। উপযুক্ত নামটাই পেয়েছে বিশ্বকাপের আয়োজক এ স্টেডিয়াম। দেখতে আরব উপসাগরে বিচরণ করা মাছধরা নৌকার মতো। এ স্টেডিয়ামেই গতকাল মান রক্ষার ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ক্যামেরুন-সার্বিয়া। মান রাখা হলো কি? দুই দল ৩-৩ গোলের ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সার্বিয়া ২-০ গোলে হেরেছে ব্রাজিলের কাছে। অন্যদিকে ক্যামেরুন হেরেছে সুইজারল্যান্ডের কাছে (১-০)। পরাজয়ের তিক্ততা ভুলতে জয় চেয়েছিল দুই দলই। তবে গোল উৎসবের ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগিই করতে হলো তাদের। বিশ্বকাপে টানা ৯ ম্যাচে পরাজয়ের লজ্জাজনক রেকর্ড থেকে বেঁচে গেল ক্যামেরুন। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে মেক্সিকো টানা ৯ ম্যাচ হেরেছিল বিশ্বকাপে। ক্যামেরুন ২০০২ সাল থেকে টানা আট ম্যাচ হেরেছে। গতকাল সার্বিয়ার কাছে হারলেই লজ্জাজনক রেকর্ডে মেক্সিকোর সঙ্গে ক্যামেরুনের নামও উচ্চারিত হতো। সে লজ্জা থেকে বেঁচে গেল ক্যামেরুন। গতকাল কাতারের আল ওয়াকরাহ শহরের আল জানুব স্টেডিয়ামে সার্বিয়ার বিপক্ষে ড্রয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ক্যামেরুন সমর্থকরা। ২০০২ সালে সৌদি আরবের বিপক্ষে সর্বশেষ জয় পায় ক্যামেরুন (১-০)। এরপর জার্মানি (২-০), জাপান (১-০), ডেনমার্ক (২-১), নেদারল্যান্ডস (২-১), মেক্সিকো (১-০), ক্রোয়েশিয়া (৪-০), ব্রাজিল (৪-১) ও সুইজারল্যান্ডের (১-০) কাছে টানা পরাজিত হয় ক্যামেরুন। গতকালও ম্যাচে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে ড্র করার জন্য। ২৯ মিনিটে চার্লসের গোলে ক্যামেরুন এগিয়ে গেলে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে পাভলোভিচ ও মিলিনকোভিচের গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় সার্বিয়া। এরপর ৫৩ মিনিটে মিত্রোভিচের গোলে ব্যবধান ৩-১ হলে সার্বিয়ার জয়টাই অবধারিত মনে হচ্ছিল। তবে ৩ মিনিটের এক ঝড়ে ২ গোল করে সমতায় ফেরে ক্যামেরুন। আবুবাকার ৬৩ মিনিটে ও এরিক ম্যাক্সিম ৬৬ মিনিটে গোল করেন ক্যামেরুনের পক্ষে। কোচ রিগোবার্টের হঠাৎ আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনাটা কাজে লেগে যায়। ক্যামেরুনের কোচ রিগোবার্ট সঙের দারুণ একটা রেকর্ড আছে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে রজার মিলার নেতৃত্বে গঠিত ক্যামেরুন দলে রিগোবার্টও ছিলেন। সে সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ৩৫৮ দিন। রজার মিলার বয়স তখন ৪২ বছর ৩৫ দিন। দুই সতীর্থের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল ২৪ বছর ৪২ দিনের! বিশ্বকাপের ইতিহাসে দুই সতীর্থের বয়সের ক্ষেত্রে এটাই সর্বোচ্চ ব্যবধান। পরবর্তীতে ক্যামেরুনকে নেতৃত্বও দিয়েছেন রিগোবার্ট।
বর্তমানে তিনি দলটির কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশটির ইতিহাসের সেরা ফুটবলারদের একজন রিগোবার্ট। তবে কোচ হিসেবে ঠিক সুবিধা করতে পারছেন না। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর কেবল দুটি ম্যাচে জিতিয়েছেন ক্যামেরুনকে। একটি আলজেরিয়ার বিপক্ষে (২-১), অন্যটি বুরুন্ডির বিপক্ষে (১-০)। বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো না করলেও অন্তত এক ম্যাচে পয়েন্ট পেয়েছে তার দল। অবশ্য এই ১ পয়েন্ট নিয়ে বড় কোনো আশা করতে পারছেন না ক্যামেরুন সমর্থকরা। কারণ, সামনেই পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল! ক্যামেরুন-সার্বিয়া ম্যাচ ড্র হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পেতে পারে সুইসরা। সামনের ম্যাচে সার্বিয়ার সঙ্গে ড্র করলেই নকআউট পর্বে খেলতে পারবে তারা।