বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভারতকে হারিয়ে সিরিজ জয়

মেজবাহ্-উল-হক

ভারতকে হারিয়ে সিরিজ জয়

পরাজিত রোহিত শর্মাদের সান্ত্বনা মুশফিকদের -রোহেত রাজীব

মেহেদী হাসান মিরাজ- অবিশ্বাস্য, অলৌকিক! টানা দুই ম্যাচে ক্যারিশমাটিক পারফরম্যান্স দেখালেন। গতকাল মিরপুরে ৫ রানের দারুণ জয় পেল টিম বাংলাদেশ। মিরাজের দাপটে তিন সিরিজের ওয়ানডেতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল লাল-সবুজরা। তবে কাল নাটক জমিয়ে তুলেছিলেন রোহিত শর্মা। চোটের কারণে তার ব্যাটিংই করার কথা ছিল না। কিন্তু দলের খারাপ অবস্থা দেখে ৮ নম্বরে ব্যাট হাতে নামেন। যে ম্যাচে সহজ জয় পাওয়ার কথা বাংলাদেশের, সে ম্যাচে ভারতকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন ভারতীয় ক্যাপ্টেন। শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৪০ রান। মুস্তাফিজুর রহমান মেডেন ওভার করলেন। ভারতের জন্য ১২ বলে দরকার সেই ৪০ রান। কিন্তু ৪৯তম ওভারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এসে ২০ রান দেন। ওই ওভারে দুবার জীবন পান রোহিত। দুটি সহজ ক্যাচ মিস করেন ইবাদত হোসেন ও এনামুল হক বিজয়। নতুন জীবন পেয়ে বেপরোয়া ব্যাটিং করতে থাকেন রোহিত। ৬ বলে ২০ রান। বোলিংয়ে মুস্তাফিজ। ৫ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ১৪ রান নেন রোহিত। শেষ বলে ভারতের দরকার মাত্র ১টি ছক্কা। স্ট্রাইকিংয়ে ওয়ানডের তিন ডাবল সেঞ্চুরির মালিক রোহিত। রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি। কিন্তু মুস্তাফিজ দিলেন ডট বল। নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়। ২০১৫ সালে মুস্তাফিজুর রহমানের দাপটে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার মিরাজের ক্যারিশমায় আবারও সিরিজ জিতল। ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে টাইগারদের দাপট অব্যাহত থাকল। ২০১৬ সালের পর হোমে দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। গতকাল প্রথমে ব্যাট করে টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার পরও বাংলাদেশ ২৭১ রান করে। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ খেলেন ৮৩ বলে ১০০ রানের হার না মানা ইনিংস। মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৭৭ রান। সপ্তম উইকেট জুটিতে মিরাজ-মাহমুদুল্লাহর ১৪৮ রানের দুর্দান্ত পার্টনারশিপে ২৭১ রান করে বাংলাদেশ।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৬৬ রান করে ভারত। বাংলাদেশের মতো ভারতের ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো হয়নি। ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েন সফরকারীরা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে শ্রেয়াস আইয়ার ১০৭ রানের জুটি গড়ে লড়াই জমিয়ে তুলেছিলেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল হয়তো কাভার করেই ফেলবে ভারত। কিন্তু অবতার হয়ে এলেন সেই মেহেদী মিরাজ। আইয়ারকে ৮২ রানে ফিরিয়ে দেন। এরপর অক্ষরও আর বেশি দূর যেতে পারেননি। ৫৬ রানে তাকে আটকে দেন ইবাদত হোসেন।

গতকাল ভারতীয়রা বিপৎসংকেত পেয়েছিল ফিল্ডিংয়ের সময়ই। অধিনায়ক রোহিত শর্মা দ্বিতীয় ওভারেই বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে চোট পান। স্লিপে ক্যাচ নিতে গিয়ে আহত হয়ে দ্রুত মাঠ ছাড়েন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। ইনজুরি গুরুতর হওয়ায় আর ফিল্ডিংয়েই নামেননি। তার পরিবর্তে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নামেন বিরাট কোহলি। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি। দ্বিতীয় ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে কোহলিকে ‘প্লেড অন’ করেন ইবাদত। দ্রুত আরেক ওপেনার ধাওয়ানকেও ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ৩ নম্বরে ব্যাট করতে নামা ওয়াশিংটন সুন্দরকে ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা লোকেশ রাহুলকে সুবিধা করতে দেননি মিরাজ। দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ-বিফোরের ফাঁদে ফেলেন। তবে ইনজুরি নিয়ে ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৮ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে রোহিত ম্যাচে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করেন।

ক্যারিশমাটিক সিরিজ জয়ের পরও ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই গেল। কারণ এ ম্যাচেও যে ৬৯ রানেই হারাতে হয়েছে ৬ উইকেট। এরপর মাহমুদুল্লাহ ও মিরাজের ১৪৮ রানের রেকর্ড জুটি। মাহমুদুল্লাহ এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলেন ৭৭ রানের দারুণ এক কার্যকর ইনিংস। আর মিরাজ খেলেন ৮৩ বলে হার না মানা ১০০। মিরাজের ক্যারিশমায় যেন সব ব্যর্থতা ঢেকে গেল সাফল্যের ছায়ায়। টানা দুই ম্যাচে সেরা মিরাজ। অলৌকিক মিরাজেই যে ভারতের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর