বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে বিএনপিকে ফের অনুরোধ পুলিশের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, জননিরাপত্তা ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের সামনে বিএনপিকে গণসমাবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না। আইন অমান্য করে সেখানে সমাবেশ করলে বিএনপির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিএমপি কমিশনার এ সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করতে অনুরোধ জানান। গতকাল বিকাল ৫টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি। ঢাকা অভিমুখে সড়কগুলোতে যেসব তল্লাশি ও চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে তা ডিএমপির নিয়মিত কার্যক্রম বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিএনপি ঢাকা শহরে ১০ লাখ লোকের জমায়েত করতে চায়। তাদের পার্টি অফিসের সামনে এত লোকের সমাগম করা সম্ভব হবে না। সেখানে সর্বোচ্চ ১ লাখ লোক দাঁড়াতে পারবে। বাকি ৯ লাখ লোক ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়বে। যার ওপর বিএনপির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সেখানে বরং জনদুর্ভোগ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়। পরে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে আগ্রহী নয়। তারা পল্টন বা তার আশপাশে কোনো রাস্তায় করতে আগ্রহী। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে- সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা এর মতো কোনো খোলা মাঠে সমাবেশ করতে হবে। আমরা জনদুর্ভোগ এবং জননিরাপত্তা বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।  তিনি বলেন, আমি তাদের বলেছি- আপনারা যে কোনো খোলা মাঠে যেতে পারেন বা অন্য কোনো প্রস্তাব দিতে পারেন। অন্য প্রস্তাব হিসেবে তাদের বলা হয়েছে- ইজতেমা মাঠ আছে, সেখানে আপনারা ১০ লাখ লোক জমায়েত করতে পারবেন। এ ছাড়া পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার মাঠ আছে, সেখানে যেতে পারেন। সেখানে করলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। এমনকি ঢাকার ভিতরে মিরপুর কালশীর মাঠেও চাইলে তারা সমাবেশ করতে পারে। ইতিপূর্বে তারা সেখানে সমাবেশ করেছেও। খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আইন অমান্য করার চেষ্টা করা হলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, উনারা এর আগেও সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করেছেন। উনারা সোহরাওয়ার্দীতে মিটিং করলে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার। আমি নিরাপত্তা দেব। উনাদের নিরাপত্তার সামান্যতম কোনো ঘাটতি হবে না। কোনো প্রকার বাধা দেওয়া হবে না।

পল্টনে গতকালের সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজকে অফিশিয়াল ডে, তারা নয়াপল্টনে রাস্তা দখল করে সমাবেশ করছে।’ গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে, এটা তো আইনানুগ কাজ উনারা করেন নাই। আর তারা চাল, ডাল ও লাকড়ি নিয়ে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। চাল ও ডালের বস্তায় বিস্ফোরক দ্রব্য থাকার তথ্যে তাদের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।

ঢাকার প্রবেশমুখে চৌকি বসিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে মোবাইল ফোনে বিএনপির কোনো ছবি বা নেতাদের নম্বর পেলে তাকে আটক করার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। বিভিন্ন স্থানে আমাদের নিয়মিত চেকপোস্ট চলছে। সামনে ১ থেকে ১৫ তারিখ একটা বিশেষ অভিযান ঘোষণা করেছি। এই মাসে ১৪ ডিসেম্বর, ১৬ ডিসেম্বর, ২৫ ডিসেম্বর আছে, বড় বড় ৫টা প্রোগ্রাম আছে। কোনো নাশকতা যেন না ঘটে সে জন্য আমরা ঢাকার অভিমুখে চেকপোস্ট বসিয়েছি। কোনো যাত্রীর ঢাকা আসা আমরা বন্ধ করি নাই।

এর আগে গতকাল সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপিকে অনুমতি ছাড়া কোথাও সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। ডিএমপির অনুমোদন ছাড়া কোনো স্থানে কর্মসূচি পালন করা যাবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য বিএনপিকে আবারও অনুরোধ করা হচ্ছে। যদি তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায়, তাহলে বিএনপি যে সমস্যার কথা বলেছে সেটা সমাধান করা হবে। সোমবার বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী সমাবেশের স্থান নয়াপল্টনের পরিবর্তে আরামবাগ সড়কে করার মৌখিক প্রস্তাব দিলে সেটি নাকচ করে দেয় ডিএমপি।

সর্বশেষ খবর