গ্রেফতারের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করবে। জনগণ জেগে উঠেছে। তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করে আর ঘরে ফিরে যাবে না। জেল-জুলুম, গ্রেফতার-নির্যাতনসহ সব রকমের ত্যাগ স্বীকারে আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত। জনগণের এই সাড়া দেখে সরকার ভীত হয়ে দমননীতি শুরু করেছে। তিনি বলেন, আশার বিষয় হচ্ছে, দেশের সর্বস্তরের মানুষ আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। ভয়াবহ সংকট থেকে মুক্তি চায়। সেই পরিবর্তন ইনশা আল্লাহ আসন্ন। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীসহ দলমতনির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে (আজকের) ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। গ্রেফতারের আগে বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় আজকের গণসমাবেশ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ কর্মসূচির শেষ কর্মসূচি ঢাকায়। আমরা ভেন্যু হিসেবে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছি। পুলিশকে সে হিসেবে অবগত করেছি। ১৩ নভেম্বর চিঠি দিয়েছি। ডিএমপি আগ বাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে চিঠি দিল, যা আমরা চাইনি। কোনো আলোচনা না করেই এ চিঠি হঠাৎ করে দেওয়া দুরভিসন্ধিমূলক। আমরা আবারও ২০ নভেম্বর চিঠি দিয়ে নয়াপল্টনে সমাবেশের কথা জানিয়েছি। আমাদের দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিরা কয়েকবার গেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনারের অফিসে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের পক্ষে সমাবেশ করা সম্ভব নয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারদিকে দেয়াল পরিবেষ্টিত। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরে প্রবেশ ও বহিগর্মনের গেট একটাই আমাদের জন্য খোলা হয়। সেটি দিয়ে একজন করে মানুষ ভিতরে যেতে পারে। যা গণসমাবেশের জন্য অত্যন্ত সময় ক্ষেপণ হবে এবং একেবারেই অনিরাপদ। যদি মাঠের বাইরে জরুরি বহির্গমনের প্রয়োজন হয় তবে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে অনেক মানুষের প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পক্ষান্তরে নয়াপল্টন খোলা জায়গা। আমরা সেখানে শত শত সভা-সমাবেশ করেছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সেখানে জাতীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেক। কোনো দিন কোনো সমস্যা আমাদের নেতা-কর্মীরা করেননি। মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ থেকে আমরা আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দাবি উপস্থাপন এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিএনপির এ সমাবেশ হবে শতভাগ শান্তিপূর্ণ। সরকারের দায়িত্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের অবৈধ মন্ত্রী ও নেতৃবৃন্দ হীন-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিস্থিতি জটিল করতে অনৈতিক কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের, গ্রেফতার, পুলিশ কর্তৃক বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, সারা মহানগরে বিশেষ অভিযানসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যেই হুমকি দিচ্ছেন। দায়িত্বহীন মন্ত্রীরা বলছেন, ‘হেফাজতের মতো সাফ করে দেওয়া হবে’। তাদের ভাষাই হচ্ছে সন্ত্রাসী ভাষা। আগের মতো অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গি ধুয়া তুলে দেশে এক ভয়ংকর ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এর দায়দায়িত্ব সবটাই সরকারের। বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণসমাবেশ বিএনপির কর্মসূচি। এতে অন্য রাজনৈতিক দলের মঞ্চে ওঠার পরিকল্পনা নেই। তারা সবাই যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছেন। যার যার অবস্থান থেকে ঘোষণা আসার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি শতভাগ শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক। শাসকগোষ্ঠীর কাজ ও কথা দুটোই চরম সন্ত্রাসী। তারা জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে সমাবেশ প করার লক্ষ্যে। জনগণ সব ভয়ভীতি, নির্যাতন উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ আন্দোলনে স্বতঃফূর্তভাবে অংশ নেবে।
নয়াপল্টনে বুধবারে পুলিশের হামলা, গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও তার সামনে পুলিশের হামলা, গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেফতারসহ হতাহতের ঘটনাটি ছিল সরকারের পরিকল্পিত। এই কাপুরুষোচিত ও রোমহর্ষক ঘটনা স্বাধীন দেশে কল্পনাতীত। পুলিশের এই জঘন্য, ন্যক্কারজনক, বর্বরোচিত হামলা সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এ ঘটনা গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়ার শামিল। আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে গণ-আন্দোলনে পতনের ভয়ে ভীত হয়ে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, অনির্বাচিত সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে এবং এই দিনকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার শুরু করেছে সারা দেশে। শুধু মহানগরেই গ্রেফতার ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গ্রেফতারগুলো হচ্ছে কোনো ওয়ারেন্ট ইস্যু না করেই। আগে তালিকা করেছে, সে তালিকা অনুযায়ী বেআইনিভাবে সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে গ্রেফতার চালাচ্ছে। ১০ তারিখে (আজ) আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জ্বালানি, বিদ্যুৎ, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, চলমান আন্দোলনে আন্দোলনকারী ১০ জন নেতা-কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদ, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবিতে এ গণসমাবেশ। গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। অন্যথায় সব দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।