মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে নির্দেশ মন্ত্রিসভার

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ব্যয়েও লাগবে অর্থ বিভাগের সম্মতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো স্বায়ত্তশাসিত, লেজিসলেটিভ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের কাছ থেকে সম্মতি নেওয়ার বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০২২’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ছাড়া দেশের সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় নির্দেশ দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তায় আরও জোর দিতে বলা হয়েছে। জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তার বিষয়টিও খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরবর্তী সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য যে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যেসব গ্যাস ও তেল পাইপলাইনে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেসব কাজও তাড়াতাড়ি শেষ করে সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, যাতে পরিবহন খরচ না লাগে এবং দ্রুত গ্যাস ও তেল সরবরাহ করা যায়। এখন সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন জোরদার করতে বলা হয়েছে, বিশেষ কোনো কারণ আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দু-তিন বছর ধরেই এ বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এখন বিষয়টির ওপর আরও জোর দেওয়া এবং আধুনিক উপকরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই যেন ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো বিষয় হ্যাক করা না যায়। এ ছাড়া ধীরে ধীরে ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যাওয়া হচ্ছে। এগুলোতেও যেন ভালো রকমের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। মন্ত্রিসভা সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সরকারি কর্মচারী আইনে একটা জিনিস পরিষ্কার ছিল না। আইনে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থনৈতিক বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত, লেজিসলেটিভ বডি যেগুলো, যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি- এদের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পরিষ্কার ছিল না। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। তারা বলেছিল, তাদেরও বেশির ভাগ ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে হয়। সুতরাং তাদের বিষয়েও অর্থ বিভাগের একটা অথরিটি থাকতে হবে। সংবিধানের ৮৪, ৮৫ ও ৮৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রের যত ব্যয় আসবে সব একটা অ্যাকাউন্টে আসবে, একটা অ্যাকাউন্ট থেকেই খরচ করা হবে। যেটাকে আমরা ট্রেজারি বলি। এ ট্রেজারির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলো অর্থ বিভাগ। সুতরাং খরচের ক্ষেত্রে যেন অর্থ বিভাগের এখতিয়ার থাকে। যদি কোনো করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের মতো বেতন-কাঠামো ঠিক করে নেয়, তাহলে তো হবে না। সে জন্য যে কোনো অর্থনৈতিক বিষয় হলে অর্থ বিভাগের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নিতে হবে। এ জন্যই আইনটির মধ্যে এই ছোট কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী আইন হওয়ার আগেও এ বিধান ছিল জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগেও এটা বাধ্যতামূলক ছিল। এখন আইনগত একটা ভিত্তি দেওয়া হলো। এ ছাড়া আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে দ্বৈত কর আরোপণ পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ-সংক্রান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাবসহ আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ধন্যবাদ : মানুষের কথা চিন্তা করে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করার চেষ্টা করে গেছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বিদায়বেলায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনি বলেন, এটিই তার শেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশগ্রহণ। ১৫ ডিসেম্বর থেকে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যাচ্ছেন। বৈঠকে তাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।

সর্বশেষ খবর