শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সাভার স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাভার স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

মহান বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে প্রথমে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তখন রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পরে একে একে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, সরকারের পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা জানানোর পর দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বাধীনতার মহান স্থপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দলের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পৃথক আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এ সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ : মহান বিজয় দিবসে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয় সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ। অভিবাদন মঞ্চ থেকে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং নাতনি সামা হোসাইন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শুরু হয় বিজয় দিবস উদযাপনের এ আয়োজন। ১০টা ২৭ মিনিটে ঘোড়া সুসজ্জিত মিলিটারি পুলিশের মোটর শোভাযাত্রাসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধান অতিথি জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তিন বাহিনীর প্রধান, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। এর আগে ১০টা ২৩ মিনিটে কাতার সশস্ত্রবাহিনীর উপহারের আরবীয় ঘোড়া সুসজ্জিত মিলিটারি পুলিশের মোটর শোভাযাত্রাসহ প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তাকে স্বাগত জানান মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানরা। প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে অভিবাদন মঞ্চে যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিভিআইপি গ্যালারিতে তারা আসন নেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানিয়ে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর খোলা জিপে প্যারেড পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্যারেড পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রপতি আবার অভিবাদন মঞ্চে অবস্থান নেন এবং মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের সালাম নেওয়া শুরু করেন। কুচকাওয়াজের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর প্রতিকৃতি প্রদর্শনের পর সুসজ্জিত বাহনে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে অভিবাদন জানায়। মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের পাশাপাশি প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশ থেকে রাষ্ট্রপতিকে সালাম দেওয়া হয়। আকাশ থেকে ফ্রিফল জাম্প দিয়ে পতাকা নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করেন প্যারা কমান্ডোরা। আর্মি এভিয়েশন, নেভাল এভিয়েশন ও র‌্যাব ফোর্সেসের ফ্লাইপাই, দুঃসাহসিক প্যারা কমান্ডো সদস্যদের ফ্রিফল জাম্প কুচকাওয়াজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের মার্চ পাস্টের পর যান্ত্রিক বহরে সুসজ্জিত সশস্ত্রবাহিনীর উল্লেখযোগ্য সমরাস্ত্রগুলো প্রদর্শন করা হয়। যান্ত্রিক বহরের প্রদর্শনীর পরপরই শুরু হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এক মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট ও এরোবেটিক ডিসপ্লে। মহান বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ-২০২২ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, বাংলাদেশ জেল এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের গ্যালারিতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বৈদেশিক কূটনৈতিক ব্যক্তি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোর ৬টা ৩ মিনিটে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে শুরু হয় মহান বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকা পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় (তেজগাঁও) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের ব্যবস্থাপনায় একটি আর্টিলারি রেজিমেন্টের ৬টি গান ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি গান স্যালুট প্রদর্শন করে।

সর্বশেষ খবর