সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে আলোচনা

১৭ দিন ধরে মহাসচিব ছাড়া চলছে বিএনপি । ছয়জনের নাম নিয়ে গুঞ্জন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে আলোচনা

গত ৮ ডিসেম্বর ভোরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটকের পর গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তারপর ১৭ দিন ধরে মহাসচিব ছাড়া চলছে বিএনপি। এ কারণে কমিটি অনুমোদন, যৌথ সভা আহ্বান, দলীয় আর্থিক লেনদেনে চেকবইয়ে স্বাক্ষরসহ নানা কাজে সমস্যা হচ্ছে। এ সংকটকালে মির্জা ফখরুলের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব কে হবেন, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দলের নেতা-কর্মীসহ সব মহলে। বিএনপির গঠনতন্ত্রে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। সেজন্য বিএনপির হাইকমান্ড এ নিয়ে ভাবছে না। তবে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে শীর্ষ ছয়নেতাসহ আলোচনায় রয়েছেন অনেকে। জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশা করছি উচ্চ আদালতে দলের মহাসচিবের জামিন হবে। আমরা উচ্চ আদালতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, অতীতেও দলের মহাসচিব কয়েক মাস কারাগারে ছিলেন। তখনো ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করিনি। তিনি দাবি করেন, মহাসচিবের অনুপস্থিতিতে দলের কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে উচ্চ আদালতে জামিন পেতে বিলম্ব হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন নিয়েও তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। সূত্রমতে, ঢাকার বিভাগীয় মহাসমাবেশের আগে নেতা-কর্মীরা আটক হওয়ার পরও দল বেশ চাঙা আছে। দলীয় এমপিরাও সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ মুহূর্তে দলের মহাসচিবের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব কে পাচ্ছেন- তা নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন। এরই মধ্যে একজন যুগ্ম মহাসচিবকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গুজবও রটেছে। যদিও বিএনপি বলছে, এ মুহূর্তে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে মহাসচিব পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা নেই। মহাসচিব পদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও। স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আবার কেউ বলছেন, বৈশ্বিক রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং কর্মী ধরে রাখতে আর্থিক বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন। সে জায়গা থেকে এ দুজনের একজনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। গঠনতন্ত্রের ধারাক্রম অনুযায়ী, মহাসচিবের অবর্তমানে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, তার অবর্তমানে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে মাহবুব উদ্দিন খোকনের নাম আলোচনায় রয়েছে। এ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ আলোচনায় আছেন। গঠনতন্ত্র অনুসারে মহাসচিব আর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের অনুপস্থিতিতে ১ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার কথা। বিএনপিতে সাতজন যুগ্ম মহাসচিব রয়েছেন। তারা হলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারুন-অর-রশিদ ও আসলাম চৌধুরী। তারাও আলোচনায় রয়েছেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন লন্ডনে থাকা তারেক রহমান। এ অবস্থায় মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুলই অন্যতম শীর্ষ কান্ডারি। গত প্রায় ১৫ বছরে তিনিও একাধিকবার জেলে গেছেন। কেবল দীর্ঘমেয়াদে কারাবাসের সম্ভাবনা থাকলে দলের চেয়ারম্যান নির্বাহী আদেশে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। এর আগে মির্জা ফখরুল কয়েক মাস কারাগারে থাকলে বা বিদেশে চিকিৎসার জন্য গেলেও কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। দলের সাংগঠনিক বিষয়াদি বর্তমানে মির্জা ফখরুলের অবর্তমানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেখছেন। এদিকে দলের বিভিন্ন কমিটি অনুমোদন, যৌথ সভা আহ্বান, দলীয় আর্থিক লেনদেন, চেকবইয়ে স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাচিবিক কার্যক্রম সম্পাদন করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি কারাগারে থাকায় ব্যাংকিং লেনদেন করতে পারছে না দলটি। এতে চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিবের অবর্তমানে কে পাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। দলের দায়িত্বশীলরা বলছেন, দলের যে কোনো বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কারণ গঠনতন্ত্র তাকে সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর