শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

খসরু ও তার স্ত্রীসহ পাঁচজনের নামে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্লট জালিয়াতি ও নকশা বহির্ভূতভাবে হোটেল সারিনা নির্মাণের অভিযোগে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার স্ত্রীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার বাদী হয়ে মামলাটি করেন। সংস্থার সচিব মাহবুব হোসেন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে জানান, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতি ও নকশাবহির্ভূতভাবে হোটেল সারিনা নির্মাণের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানাধীন ঢাকার বনানী এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর প্লটটি ডেভেলপ করার নামে ২২ তলা ভবন নির্মাণ করে অধিকাংশ ফ্লোর আত্মসাৎ করেছেন। রাজউকের নকশা বহির্ভূত ওই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাশের ২৫ নম্বর প্লটেও নকশা বহির্ভূত ২১ তলাবিশিষ্ট হোটেল সারিনা নির্মাণ করেছেন তারা। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০ ধারায় মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলম, শ্যালিকা সাবেরা সরোয়ার নীনা ও তার স্বামী গোলাম সরোয়ার এবং রাজউকের নকশা অনুমোদন শাখার বিল্ডিং ইন্সপেক্টর আওরঙ্গজেব নান্নু।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলমের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, তারা উভয়েই বনানী এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৭ ও ২৫ নম্বর প্লটে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল সারিনা ইন লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডার। জব্দ করা আলামত এবং সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় অভিযুক্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং তার স্ত্রী তাহেরা খসরু আলম হোটেল সারিনার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি গোপন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ভায়রা ভাই গোলাম সরোয়ার এবং শ্যালিকা সাবেরা সরোয়ার নীনার সঙ্গে আমীর খসরু ও তার স্ত্রীও হোটেল সারিনা ইন লিমিটেডের মালিক। অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় রাজউকের কাছ থেকে বনানী বাণিজ্যিক এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর প্লটটি নিলামে ক্রয় করে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। ১৯৯৯ সালে নিয়মবহির্ভূত একটি বেজমেন্ট ও চারটি ফ্লোর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়ার শর্তে ডেভেলপার ও আপন ভায়রা ভাই গোলাম সরোয়ারকে ওই প্লট দেওয়া হয় ভবন নির্মাণের জন্য। যখন গোলাম সরোয়ারের মালিকানাধীন ডেভেলপারকে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন প্রতিষ্ঠানটি অনিবন্ধিত ছিল। এরপর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তাহেরা খসরু আলম, গোলাম সরোয়ার ও সাবেরা সরোয়ার নীনা পরস্পর যোগসাজশে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত না মেনে ২২ তলা ভবন নির্মাণ করেন। এরপর চারটি বাদে বাকি সব ফ্লোর নিজস্ব মালিকানায় নিয়ে আত্মসাৎ করেন তারা। এ ছাড়া আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার ভায়রা গোলাম সরোয়ার বনানীর ১৭ নম্বর রোডে বসতি টাওয়ার নামে পরিচিত ২৫ নম্বর প্লটটিও যৌথ নামে ক্রয় করেন। রাজউক সেখানে ১৫ তলা নকশার অনুমতি দিলেও তারা ২১তলা ভবন নির্মাণ করেন।

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রতিবেদনে বলেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রথম প্রেসিডেন্ট, সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পরিকল্পিতভাবে নানা কৌশলে প্রথমে নিজের ভায়রাকে ওই প্রতিষ্ঠানের (সিএসই) বর্ণিত ২৭ নম্বর প্লটের ডেভেলপার নিযুক্ত করেন। পরে সেখানে স্ত্রীসহ নিজে যুক্ত হয়ে প্লটটি আত্মসাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঘটনার ২১ বছর পর দুদকের এই মামলা রাজনৈতিক চাপ কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি-না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, ঘটনা পুরনো হলে কী হবে, দুদকে যদি অভিযোগ না আসে? দুদকে অভিযোগ আসার পর দুদক প্রথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।

সর্বশেষ খবর